দামোদর নদ। —ফাইল চিত্র।
দামোদরের উপরে ৪৬ বছর আগে তৈরি হয়েছিল কৃষক সেতু। দুই লেনের এই সেতু বর্ধমান শহরের উন্নতিতে সহায়ক হয়েছিল। শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত দক্ষিণ দামোদর এলাকা বলে পরিচিত রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষ, জামালপুরের উপরে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল। তার পরে দামোদরে অনেক জল গড়িয়েছে। জিটি রোড চার লেনের হয়েছে, শহরে টাউন সার্ভিস ছাড়া অন্য বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ফলে, শহরের একাংশে ব্যবসায় প্রভাব পড়েছিল। এ বারের রাজ্য বাজেটে কৃষক সেতুর পূর্ব দিকে সমান্তরাল ভাবে চার লেনের আর একটি সেতু তৈরির ঘোষণায় দক্ষিণ দামোদর তো বটেই, বর্ধমান শহরের আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটবে বলে আশা বাসিন্দাদের। বর্ধমান ও দক্ষিণ দামোদরের পাশ দিয়ে আর্থিক করিডর যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তা বাস্তবের মুখ দেখলে বর্ধমান-সহ লাগোয়া অঞ্চলের চরিত্র পাল্টে যাবে বলেও মনে করছেন অনেকে।
বর্ধমান ও দক্ষিণ দামোদর এলাকাকে কৃষিভিত্তিক শিল্পের ‘আঁতুড়ঘর’ বলা চলে। চালকলই রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশোটি। এ ছাড়া, তুষ থেকে তেলের কল (রাইস ব্রান), হিমঘর রয়েছে। চালকল মালিক সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মালেকের দাবি, “কৃষক সেতুর পাশেই শিল্প সেতু হবে। তাতে দক্ষিণ দামোদর এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্পের আরও উন্নতি হবে। যোগাযোগ বাড়বে, তাতে চাষিরা উৎপাদিত ধানের দাম পাবেন।” রাজ্যে সবচেয়ে বেশি গোবিন্দভোগ ধানের চাষ হয় দক্ষিণ দামোদর এলাকায়। চাষি অনন্ত সামন্ত, আনসার আলিদের দাবি, “সেতু তৈরি হলে রাস্তা চওড়া হবে। বাণিজ্য বাড়বে, ধানেরও চাহিদা বাড়বে। আমাদেরও লাভ হবে।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্য সড়ক। এই রাস্তা দিয়ে বর্ধমানের সঙ্গে বাঁকুড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুরের যোগাযোগ। সেখানেই দামোদরের উপরে ১৯৭৩ সালে নতুন সেতুর শিলান্যাস হয়। ১৯৭৮ সালে ‘কৃষক সেতু’ চালু হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেতু তৈরির পরেই দক্ষিণ দামোদর এলাকায় চালকল তৈরি থেকে গোবিন্দভোগ ধান চাষের রমরমা শুরু হয়। জমজমাট হয় বর্ধমানের তেলিপুকুর, বিবেকানন্দ কলেজ মোড়, শাঁখারিপুকুর, পারবীরহাটা এলাকা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ভাস্কর গোস্বামী, সমাজতত্ত্ববিদ অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলেন, “নতুন সেতু হলে গতি বাড়বে। যাতায়াত বাড়বে। সমাজ ও অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। নদীর দু’পাড়ের মানুষই সুফল পাবেন।”
পূর্ব বর্ধমান জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির সভাপতি শীর্ষেন্দু সাধু বলেন, “এই সেতু তৈরি হলে বর্ধমানের ব্যবসা-বাণিজ্যে সূদুরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।” পরিবহণ ব্যবসায়ী বাবলু শর্মা জানান, সেতু দিয়ে দিনে প্রায় ৪০০ বাস চলে। আর একটি সেতু হলে পরিবহণ বাড়বে। যানজট কমে যাবে। রায়নার পলেমপুরের ব্যবসায়ী পার্বতীপ্রসাদ সন্ন্যাসীর আশা, “ছাইয়ের তৈরি ইটের ভাটা, চালকলের যন্ত্রাংশ-সহ নানা ছোট শিল্প গড়ে উঠবে।” সগড়াইয়ের বাসিন্দা নয়ন গুপ্ত, বাঁকুড়া মোড়ের মোবারক হোসেনরা মনে করেন, তেলিপুকুর ও বাঁকুড়া মোড়ের গুরুত্ব বাড়বে। বাঁকুড়া মোড়ের শিল্পোদ্যোগী সুশান্ত দাস, পরিবহণ ব্যবসায়ী গোপাল দাসেরা বলেন, “কাঁচামাল আনা, উৎপাদিত দ্রব্য বাইরে পাঠানোর গতি বাড়লে শিল্প সেতু নামটা সার্থক হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy