প্রতীকী ছবি।
পাঁচ দশক ধরে বাজারের সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে সে। এ বার তার পরিবর্ত আনার চিন্তভাবনা শুরু করেছে কৃষি দফতর। জ্যোতি আলুর বদলে হিমালিনী আলু বাজারজাত করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন রাজ্যের কৃষি-কর্তারা। তাতে সিলমোহর দিয়েছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান, ১৯৬৮ সালে জ্যোতি আলুর উৎপত্তি। বাম সরকারের আমলে ‘সর্বহারা’ পরিচয়ে এই আলুর এ রাজ্যের বাজারে প্রবেশ। ১৯৮০ সালে বাজারে আসে ‘চন্দ্রমুখী’ ও ‘পোখরাজ’। বাজারে চন্দ্রমুখী ‘কুলীন’ আলু বলেই পরিচিত। পোখরাজ জলদি জাতের আলু হলেও বাজার সে ভাবে দখল করতে পারেনি। ফুচকার আলু থেকে প্রক্রিয়াকরণের আলু— সবই জ্যোতির দখলে। বাম আমলে অবিভক্ত বর্ধমান জেলা প্রশাসন মিড-ডে মিলে আলুকাবলি দেওয়ায় উদ্যোগীও হয়েছিল। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের ৮০ শতাংশই জ্যোতি আলুর দখলে।
এ বার সেই জ্যোতি আলুর জায়গায় ধীরে-ধীরে হিমালিনীর প্রবেশ ঘটাতে চাইছে রাজ্যের কৃষি দফতর। কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিভিন্ন সরকারি খামারে হিমালিনী আলুর বীজ তৈরি করা হচ্ছে। প্রয়োগমূলক পরীক্ষার পরে কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিয়ে, জ্যোতি আলুর বদলে ধীরে ধীরে হিমালিনী চাষের জন্য চাষিদের উৎসাহী করা হবে।’’ বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মনে করছেন, ধীরে হলেও হিমালিনী ফলানো হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান-হুগলির প্রান্তে। এখনও পর্যন্ত ৮-১০ শতাংশ জমিতে হিমালিনী আলু চাষ হচ্ছে। বীজ পাওয়া গেলে হিমালিনী চাষ প্রতি বছর বাড়ত, দাবি রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি খামারের ম্যানেজারদের। পূর্ব বর্ধমানের একটি সরকারি খামারের ম্যানেজার তাপস মালিকের কথায়, ‘‘দু’বছর আগে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হয়েছিল। এ বছরও এক একর জমিতে হিমালিনী আলু বীজ উৎপাদন করা হবে। চাষিদের মধ্যে ভাল আগ্রহ রয়েছে।’’
জ্যোতির বদলে হিমালিনী চাষে উৎসাহ কেন? বর্ধমান ২ ব্লকের চাষি সঞ্জিত সেন, মেমারির শেখ নুর আলিদের কথায়, ‘‘জ্যোতি আলু সহজেই নাবিধসা রোগে আক্রান্ত হয়। সেখানে হিমালিনীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেশি। ফলনও বেশ ভাল।’’ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৌশিক ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘জ্যোতি আলুর গুণগত মান কমছে। ফলে, রোগ প্রতিরোধ থেকে উৎপাদনের হারও কমে যাচ্ছে।’’
চাষিরা জানান, প্রতি বিঘায় যেখানে ১০০ বস্তা (৫০ কেজি প্রতি বস্তা) জ্যোতি আলু হয়, সেখানে হিমালিনী অন্তত ১৩০ বস্তা হবে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের আলু গবেষক ও শিক্ষক হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৯৭৫ সাল থেকে জ্যোতি আলুতে নাবিধসা রোগ শুরু হয়। এখন কার্যত ‘মড়ক’ লাগে। তিনি বলেন, ‘‘হিমালয়ান আলু পার্বত্য অঞ্চলে হত। ২০০৯-১০ সালে সর্বভারতীয় আলু গবেষণা কেন্দ্র থেকে বাংলা-বিহারের মতো এলাকাতেও চাষ করার জন্য উৎসাহ বেড়েছে। নাবিধসা রোগের সম্ভাবনা নেই, গুণগত মানও ভাল। চাষের খরচ জ্যোতির তুলনায় কম। বিভিন্ন কারণে জ্যোতি আলু নষ্ট হয়ে যায়। হিমালিনী তিন মাস পর্যন্ত বাড়িতে সংরক্ষণ করা যাবে।’’
কৃষি দফতরের কর্তাদের একাংশের আবার মত, হিমালিনী দেখতে চন্দ্রমুখীর মতোই। অনেকে চন্দ্রমুখীর সঙ্গে মিশিয়ে হিমালিনী বাজারে বিক্রি করছেন। তাই আলাদা করে হিমালিনী এখনই বাজারে মিলছে না। এখনও কিছুটা সময় বাজার জ্যোতির দখলেই থাকবে, মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy