এই ট্রাঙ্ক থেকেই উদ্ধার হয় দেহ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
পাশের ঘরে ট্রাঙ্কে রাখা স্বামীর মৃতদেহ। স্ত্রী না কি জানতেনই না!
বর্ধমানের অন্ডালের খান্দরায় রবিবার সকালে দুর্গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরা জড়ো হন ওই বাড়িতে। খবর যায় পুলিশে। খোঁজ করতে গিয়ে পুলিশের নজর পড়ে টিনের বড় একটি ট্রাঙ্কের দিকে। সেটি খুলতেই দেখা যায় দেবানন্দ বাউরির (৪২) মৃতদেহ। নিহতের স্ত্রী লালমন্তিকে প্রথমে আটক, পরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় তিনি তাঁর আগের পক্ষের দেওরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবানন্দ ছিলেন লালমন্তির দ্বিতীয় স্বামী। তাঁর প্রথম স্বামী, ঝাড়খণ্ডের নিরসার বাসিন্দা সুরেশ ভুঁইয়া ইসিএলের বাঁকোলা এরিয়ায় কাজ করতেন। লালমন্তিকে নিয়ে খান্দরার নীলকন্ঠ ভুঁইয়াপাড়ায় ইসিএলের জায়গায় বাড়ি করে থাকতেন। তাঁদের দুই ছেলে। ২০০৯ সালে সুরেশের মৃত্যুর পরে তাঁর পরিজন হিসেবে খনিতে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি পান লালমন্তি। ২০১১ সালে বিয়ে করেন নিরসারই বাসিন্দা দেবানন্দকে। তিনিও এখানেই থাকতে শুরু করেন। পড়শিরা জানান, তিনি তেমন কিছু করতেন না।
কয়েক দিন আগে নিরসা থেকে খান্দরায় লালমন্তিদেবীর বাড়িতে আসেন সুরেশের ভাই অমরজিৎ ভুঁইয়া। পড়শিরা জানান, লালমন্তি তাঁদের কাছে দাবি করেছেন, শুক্রবার রাতে তিনি ছেলেদের নিয়ে একটি ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। পাশের ঘরে অমরজিৎ ও দেবানন্দ মদ্যপানের আসর বসায়। শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দু’জনকেই দেখতে পাননি। পুলিশের কাছে লালমন্তি দাবি করেন, অমরজিৎকে ফোন করলে তিনি নিরসার বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে দেবানন্দের কোনও খবর তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন। এ দিন সকালে বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ট্রাঙ্ক থেকে দেহ উদ্ধারের পরে লালমন্তি বলেছিলেন, ‘‘বাড়িতেই ট্রাঙ্কে স্বামীর দেহ রয়েছে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি! পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিক।’’
প্রতিবেশীদের একাংশের সন্দেহ অবশ্য লালমন্তির উপরেই পড়ে। ওই পাড়ার বাসিন্দা তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা লক্ষ্মণ পাসোয়ান দাবি করেন, স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এ কথা এলাকার অনেককে শনিবার লালমন্তি জানিয়েছিলেন। তবে দুর্গন্ধ পেয়ে বাসিন্দারা জড়ো হওয়ার আগে তিনি কাউকে কোনও খবর দেননি। বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও তিনি কিছু টের পেলেন না, এ কথা তাঁদের বিশ্বাস হয়নি। পুলিশকে জানাতেও তিনি গড়িমসি করছিলেন জানিয়ে লক্ষ্মণবাবু বলেন, ‘‘আগের পক্ষের দেওরের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তিনিই স্বামীকে খুন করিয়েছেন বলে আমাদের সন্দেহ। পুলিশের কাছেই সেই অভিযোগ জানিয়েছি।’’
পুলিশ জানায়, নিহতের গলায় ফাঁসের দাগ রয়েছে। তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে অনুমান।
খুনের মামলা রুজু করে দেহ ময়না-তদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লালমন্তির দুই ছেলে ষষ্ঠ ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। গোটা ঘটনায় ছেলে দু’টি হতচকিত। তাই তাদের এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বলে পুলিশ জানায়। তাদের আগলে রেখেছেন পড়শিরা। কিন্তু, ঠিক কী কারণে এই খুন, হলে তা পুলিশের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। আসানসোল-দুর্গাপুরের এসিপি (পূর্ব) বিমল মণ্ডল বলেন, ‘‘মহিলাকে জেরা করা হচ্ছে। আর কে বা কারা জড়িত, জানার চেষ্টা চলছে। তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy