Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

হাত বদলে আটা ডিলারের ঘরেই

জবাব খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই ডিলারের কাছ থেকে কম দামে পাওয়া প্যাকেটবন্দি আটা একাধিক হাত বদলে ফের চলে যাচ্ছে ডিলারের কাছেই। অভিযোগ, সরকারি আটাকল থেকে আসা প্যাকেট ডিলারদের কাছ থেকে কিনে সোজা ফড়েদের কাছে সামান্য বেশি দামে বিক্রি করছেন উপভোক্তারা।

বর্ধমানের একটি চালকলে ভাঙানো হচ্ছে গম। এ ধরনের আটার মান নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। নিজস্ব চিত্র

বর্ধমানের একটি চালকলে ভাঙানো হচ্ছে গম। এ ধরনের আটার মান নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৫১
Share: Save:

গরিবদের জন্য দু’টাকা কেজি দরে আটা দেয় সরকার। কিন্তু সে আটা তাঁদের পেটে যায় তো! ধন্দ রয়েছে অনেকের। পূর্ব বর্ধমান জেলায় আটার মান নিয়ে নালিশের সঙ্গে সামনে আসে এ প্রশ্নও।

জবাব খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই ডিলারের কাছ থেকে কম দামে পাওয়া প্যাকেটবন্দি আটা একাধিক হাত বদলে ফের চলে যাচ্ছে ডিলারের কাছেই। অভিযোগ, সরকারি আটাকল থেকে আসা প্যাকেট ডিলারদের কাছ থেকে কিনে সোজা ফড়েদের কাছে সামান্য বেশি দামে বিক্রি করছেন উপভোক্তারা। কিছু প্যাকেট গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফড়েরা বাকি প্যাকেট নিয়ে সোজা হাজির হন আটাকলের কাছে। মোড়ক বদলে ফের কোনও ডিলারের ঘরে পৌঁছে যায় ওই আটা।

গত সেপ্টেম্বরে মেমারির পাল্লা রোডে এক ‘ফড়ে’কে আটা বিক্রির সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আটকে রাখেন। কয়েকদিন আগে আটা ‘পাচার’ করার সময় মেমারির বড়েরা গ্রামে ৯০ বস্তা-আটা-সহ গাড়ি চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। মেমারিরই এক ডিলারকে আটা ‘পাচারে’ যুক্ত অভিযোগে খাদ্য দফতর ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পূর্ব বর্ধমানের সম্পাদক পরেশনাথ হাজরার দাবি, “নিম্ন মানের আটা থেকে ফড়েদের দৌরাত্ম্য নিয়ে আমরা খাদ্য দফতরকে বারবার বলেছি। কী ভাবে এই চক্র চলে সেটাও সবার জানা।’’

এ চক্র রোখার কোনও উপায় আছে কি? জেলা খাদ্য নিয়ামক (পূর্ব বর্ধমান) আবির বালি বলছেন, “রেশন ডিলার কোনও দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিই। কিন্তু উপভোক্তারা ভর্তুকি দ্রব্য (আটা) নিয়ে কী করবেন, সেটা দেখা আমাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে না।’’ আর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব আলম বলেন, “এ নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।’’ তিনি জানাচ্ছেন মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের রিভিউ বৈঠকেও কথা হয়েছে। সেখানে অনেকে ফের আটার বদলে গম দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

কয়েকদিন আগে মেমারি শহর ও ভাতার সদরে কয়েকটি রেশন দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, উপভোক্তারা দু’টাকা কেজি দরে ২০ কেজি আটা একবারে কিনে নিচ্ছেন। তার পরে ১০০-১৫০ মিটার দূরে একটি ভ্যানে বসে থাকা ‘ফড়ে’র হাতে দিচ্ছেন প্যাকেটগুলি। ওই ফড়ের দাবি, আট টাকা কিলো দরে তা কিনছেন তিনি। তা হলে কি কম দামের আটার প্রয়োজন নেই? উপভোক্তাদের একটা বড় অংশের দাবি, ‘‘আটা এতই নিম্নমানের যে খাওয়া যায় না। গরু কিছুটা খেলেও, বাকিটা বিক্রি করা ছাড়া, উপায় নেই।’’

খাদ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য নিম্ন মানের আটা সরবরাহের কথা মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, কল থেকে আটা আসার পরে, তার নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হয়। তার পরে তা রেশন দোকানে যায়। বহু বার আটা পরীক্ষার পরেও কোনও গলদ পাওয়া যায়নি। কিন্তু উপভোক্তা থেকে রেশন দোকানের মালিকদের একটা বড় অংশের দাবি, আটার মান এতটাই খারাপ যে ফড়েরাও তা গো-খাদ্য তৈরিতে বা মাছের খাবার প্রস্তুতকারী সংস্থাকে বিক্রি করে দেন।

খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, গরিব মানুষদের জন্য এ রাজ্যে ‘খাদ্য সুরক্ষা আইন’ চালু হয় ২০১৫ সালে। প্রথমে দু’টাকা কেজি দরে চাল-গম দেওয়া হত। পরে গমের বদলে আটা দেওয়া শুরু হয়। সরকার অনুমোদিত আটাকলগুলি গম ভাঙিয়ে, সে আটা রেশন দোকানে পাঠিয়ে দেয়। ‘অতি গরিব’ পরিবারগুলি অন্ত্যোদয় কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে দু’টাকা কেজি দরে ২০ কেজি আটা ও ১৫ কেজি চাল পায়। ‘মাঝারি গরিব’ (‌‌‌স্পেশ্যাল প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড) শ্রেণি কার্ড পিছু সাড়ে তিন টাকা কেজি দরে তিন কেজি করে আটা পায়।

রেশন ডিলারদের একাংশের অভিযোগ, ফড়ে-চক্র গড়ে ওঠার পিছনে সরকারি আটাকল মালিকদের একাংশের ভূমিকা রয়েছে। যদিও ওই আটাকল মালিকদের বক্তব্য, ‘‘সরকার যে গম দেয় তা ভাঙিয়ে দেওয়া ছাড়া, আমাদের অন্য কোনও ভূমিকা নেই।’’এ ‘চক্র’ ভাঙতে জেলা পুলিশ উদ্যোগী হচ্ছে না কেন? জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “খাদ্য দফতর ওই চক্র নিয়ে আমাদের কাছে লিখিত ভাবে কিছু জানায়নি। তা হলে আমরা কী করে তদন্ত করব?”

অন্য বিষয়গুলি:

Flour Bardhaman Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy