আদালতের নির্দেশ শোনার পরে হতাশ এক বিক্রেতা। বৃহস্পতিবার বর্ধমানের এক বাজির দোকানে। নিজস্ব চিত্র।
করোনা-পরিস্থিতিতে সমস্যা তৈরি করবে বাজির দূষণ, কয়েকদিন ধরেই জানাচ্ছিলেন চিকিৎসক থেকে পরিবেশকর্মীরা। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এ বছর রাজ্যে সমস্ত রকম বাজি নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিল। নির্দেশ হাতে না এলেও তা কার্যকর করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে জেলার পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে বাজি-বিক্রেতাদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ হাতে আসা মাত্র কার্যকর করা হবে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজি বিক্রির মূল বাজার। এ ছাড়া, কাটোয়া, কালনা, মেমারিতেও বাজি বিক্রির ছোট-ছোট বাজার রয়েছে। সেগুলির দিকে নজর রাখা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
কোর্টের রায়ে খুশি পরিবেশপ্রেমী থেকে কোভিড-যোদ্ধাদের অনেকেই। পরিবেশকর্মী সন্তু ঘোষ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা পরিবেশ বিজ্ঞানী অপূর্বরতন ঘোষেদের কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, করোনা আক্রান্তের ১৭% জনের মৃত্যুর কারণ দূষিত বায়ু। বাজির ধোঁয়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। করোনা আক্রান্তেরা আরও মুশকিলে পড়বেন। হাইকোর্টের এই রায় যুগান্তকারী।’’
চিকিৎসকদেরও দাবি, দীপাবলির সময়ে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে। বাজি থেকে নির্গত বালি, ধুলো, সিলিকন ‘ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়’ (সিওপিডি), হাঁপানির রোগীদের সমস্যা বাড়ায়। চিকিৎসকদের মতে, করোনা রোগী বা উপসর্গ রয়েছে, এমন মানুষজনের জন্য বাজি আদতে বিষবায়ু বহন করবে। তাই হাইকোর্টের রায় খুব অর্থবহ।
আদালতের নির্দেশে মাথায় হাত পড়েছে বাজি বিক্রেতা ও কারিগরদের। কালনা-মেমারির নানা গ্রামে বাজির কারিগরেরা আছেন। তাঁরা এই সময়ে আতসবাজি তৈরি করে সংসার চালান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কারিগরের কথায়, ‘‘দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোর সময় বাজির বরাত থাকে। এ বার তা মেলেনি। কালীপুজোর জন্য বরাত এসেছিল। লকডাউনের পর থেকে কাজ নেই। এ বার বাজি তৈরিও বন্ধ হয়ে গেল। খাব কী?”
বর্ধমানের তেঁতুলতলা বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বাঁকুড়া, বীরভূমেও বাজি যায়। কালীপুজোর সময়ে কয়েক কোটি টাকার বাজি বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এ দিন আদালতের নির্দেশের কথা শুনে শেখ জুলফিকার, সুরজ পাণ্ডে, শেখ রাজুদের কথায়, ‘‘বাজি বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে মাথায় হাত পড়ে যাবে। কিনে আনা বাজি তো আর ফেরত দেওয়া যাবে না! চাপে পড়ে গেলাম।’’
কাটোয়া স্টেশন বাজারের ব্যবসায়ী সুকান্ত মণ্ডলেরও বক্তব্য, ‘‘বাড়তি রোজগারের আশায় বাজি তুলেছিলাম। রোজগার তো দূর, লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’’ কালনার বাজি-বিক্রেতা সন্তোষ দত্তের কথায়, “দুর্গাপুজোয় আনা বাজি বেঁচে গিয়েছে। কালীপুজোর জন্য নতুন করে বাজি তুলেছিলাম। সব আশায় জল পড়ে গেল।’’ কাটোয়ার পানুহাটের ক্রেতা অমিত দেবনাথ, বর্ধমানের আলমগঞ্জের সূর্যনারায়ণ পটেলরা বলেন, ‘‘আগে থেকে বাজি কিনে রেখেছিলাম বাড়ির ছোটদের জন্যে। সব নষ্ট হবে!’’
এরই মধ্যে এ দিন কালীপুজো, ছটপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে বর্ধমানের টাউন হলে পুজো কমিটির সদস্যদের নিয়ে এক বৈঠক করে জেলা পুলিশ। ছিলেন পুরসভার আধিকারিকেরা এবং বিভিন্ন এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলরেরা। পুলিশের তরফে করোনা-বিধি মেনে চলা ও বিসর্জনের শোভাযাত্রায় নিষেধ করা হয়েছে। বিসর্জনের দিনক্ষণও পুলিশকে আগাম জানিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসাদ বিতরণ বা অন্নকূট করতে নিষেধ করা হয়েছে। পুজো কমিটির কর্তারা বিধিনিষেধ মেনেই পুজো করার আশ্বাস দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy