বাড়িতে মা ধানুদেবীর সঙ্গে সার্থক। নিজস্ব চিত্র।
বাবা মারা গিয়েছেন বছর দুয়েক আগে। তারপর থেকে চরকায় সুতো কেটেই ছেলেদের স্বপ্ন আগলেছেন মা। তবে নিত্য অভাব স্বপ্ন কাড়তে পারেনি ছেলেটার। পরিশ্রম আর জেদের মান রেখেছে সাফল্য।
এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে কাটোয়ার জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের ঘোড়ানাশ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে ৪৭৩ নম্বর পেয়েছে সার্থক লাহা। ভবিষ্যতে ইংরাজি নিয়ে পড়ে শিক্ষক হতে চায় সে। এক কামরার ঘর থেকে সেই লড়াইটাই চালিয়ে গিয়েছে সে। সার্থকই জানায়, বছর দুয়েক আগে হৃদরোগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা-ই টেনেছে সংসারটা। তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এক মোড়া সুতো কেটে দিনে ৩০-৪০ টাকা যা জোটে তা দিয়েই কোনওমতে চলে সংসার। কখনও ঠেকে গেলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মামা। এক বেলার খাবার থেকে মাকে রেহাই দিতে দুপুরের খাবারটা স্কুলের মিড-ডে মিল দিয়েই চালিয়ে নেয় সে। সন্ধ্যায় সে আর তার দাদা সঞ্জীব পড়ে ল্যাম্পের আলোতে। তবে ল্যাম্পের ঝাপসা আলো স্বপ্ন দেখা ভোলাতে পারেনি তাকে।
সার্থক জানায়, স্নাতকোত্তর পড়ার ফাঁকে দাদাই পড়া দেখিয়ে দিত তাকে। সঙ্গে ছিলেন ইংরেজি ও দর্শনের দুই গৃহশিক্ষক। বিনা পারিশ্রমিকে তাঁরা সাহায্য না করলে এ সাফল্য অধরা থেকে যেত বলেও সার্থকের দাবি। স্কুলের শিক্ষকরাও প্রয়োজনে বই দিয়ে সাহায্য করেছেন তাকে। মাধ্যমিকেও ৮৫% নম্বর পেয়ে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছিল সে। ছেলের সাফল্যে কান্না চেপে রাখতে পারেননি মা ধানুদেবী। আঁচলের খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘‘সার্থক আমার মুখ রেখেছে। ওর বাবার স্বপ্ন সত্যি করেছে।’’ কিন্তু এরপর? অভাবের সংসারে যেখানে একবেলা ভাত জোগাতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে ছেলেকে শিক্ষক বানাবেন কী ভাবে? মায়ের চিন্তা কাটে না। তাঁর আর্জি, ‘‘কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে তবেই ছেলেটা পড়তে পারবে।’’ সার্থক অবশ্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অকপটে বলে, ‘‘কেউ পাশে না দাঁড়ালেও নিজেই কিছু একটা করব পড়ার জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy