খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর। দরজা ঠেলতেই দেখা যায় পাঁচ ফুটের ব্যবধানে ঝুলছে বাবা-মেয়ে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে বর্ধমান থানার শক্তিগড়ের কৃষ্ণপুরে ঘরের কড়িকাঠ থেকে ঝুলন্ত দেহ দুটি মেলে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, সরোজকান্তি রায় (৭৫) ও তাঁর মেয়ে সুতপা রায় (৪০) দু’জনেই আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে কেন বাবা-মেয়ে এই পথ বাছলেন তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূক ও বধির মেয়ে সুতপা, ছেলে সোমনাথ আর বৌমা অপর্ণাকে নিয়ে থাকতেন সরোজবাবু। কিন্তু গত বছর পুজোর সময় সোমনাথ মারা যাওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে যায়। শক্তিগড় ফাঁড়িতে অপর্ণাদেবী অভিযোগ করেন, শ্বশুর ও ননদের প্ররোচনাতেই মারা গিয়েছেন তাঁর স্বামী। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। মাস দু’য়েক আগে জেল থেকে ছাড়া পান দু’জনে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জেল থেকে বাড়ি আসার পরেই অপর্ণাদেবী ও তাঁর একমাত্র সন্তানকে বাড়িছাড়া করেন বাবা-মেয়ে। এলাকার বাসিন্দারাও সেই সময় পাল্টা তাঁদের উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। সরোজকান্তিবাবুর বাড়িতেও হামলা চলে। এরপরেই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন ওই বৃদ্ধ। এলাকার মানুষনের দাবি, তখন থেকেই নিয়মিত বাড়িতে থাকতেন না বাবা-মেয়ে। কখনও রাতের দিকে ফিরতেন, এক-দু’দিন থেকে আবার চলে যেতেন। পাকা বাড়ি থাকলেও পাশের খড়ের ছাউনি দেওয়া একটি ঘরে বাবা-মেয়ে থাকতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, সরোজবাবুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকেও তিনি বাড়িছাড়া করেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই সোমনাথের মৃত্যুর পরে পড়শিদের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে সরোজবাবুদের উপর। বৌমা অপর্ণাদেবী বলেন, “মঙ্গলবার সকাল থেকে বাবা-মেয়ের সাড়া মিলছিল না। রাতের দিকে টর্চ নিয়ে দেখি, দু’জনের দেহ ঝুলছে। গ্রামবাসীদের বিষয়টি জানাই।” প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, জেল খাটা ও বাড়িতে পড়শিদের হামলা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি সরোজবাবুরা। গত দু’মাস ধরে কার্যত লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতেন তাঁরা। সেই থেকেই শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা করেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বাবা-মেয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy