Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Fair price shop

আলু কিনতে লাইন, বাড়ানো হচ্ছে কেন্দ্র

জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী প্রতিটি কিসানমান্ডিতে আলু বিক্রির কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন বাজারের কাছে আলু বিক্রি করা যায় কি না, খতিয়ে দেখতে বলেছেন।

বর্ধমান শহরের বংপুর মোড়ে আলু বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে লাইন।

বর্ধমান শহরের বংপুর মোড়ে আলু বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে লাইন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কালনা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২০ ০২:১০
Share: Save:

জেলার সাতটি হিমঘরে সহায়ক মূল্যে কেনা লক্ষাধিক কুইন্টাল আলু মজুত রয়েছে। ডিসেম্বরে হিমঘরগুলি বন্ধ হয়ে যাবে। তার আগে আলু বাজারজাত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সে জন্য পূর্ব বর্ধমানে আলু বিক্রির কাউন্টার বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি বিপণন দফতর। পূর্ব বর্ধমান থেকে ভিন্‌ জেলায় আলু পাঠানোও শুরু করেছে তারা।

কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ২১টি আলু বিক্রির কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। কোনও ক্রেতা সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন। এর মধ্যে শুধু কালনা-পূর্বস্থলীতেই রয়েছে ১০টি কেন্দ্র। বর্ধমান শহরের বংপুর ও ৩ নম্বর ইছালাবাদেও আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এ দিন থেকে ভাতার, কেতুগ্রামের কান্দরা, মঙ্গলকোট, রায়না, পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকে কৃষি বিপণন দফতর সরাসরি আলু বিক্রি শুরু করেছে।

কিসানমান্ডির বাইরে আলু বিক্রি করার জন্যে ‘ফার্মার্স প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন’ (এফপিও), স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাহায্য নিচ্ছে দফতর। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী প্রতিটি কিসানমান্ডিতে আলু বিক্রির কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন বাজারের কাছে আলু বিক্রি করা যায় কি না, খতিয়ে দেখতে বলেছেন। কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক সুদীপ পাল বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের কথামতো পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

জেলা কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার সাতটি হিমঘরে প্রায় ১,১৪,৭৬৫ কুইন্টাল আলু মজুত রয়েছে। পুজোর আগে থেকে আলু বিক্রির কেন্দ্র চালু করেছে দফতর। শুরুতে মাথা পিছু চার কেজি করে আলু দেওয়া হচ্ছিল। তবে তখন বাজারদরের থেকে সরকারি দরের ফারাক খুব বেশি না থাকায় বিশেষ লাইন পড়ছিল না। পুজোর সময়ে কেন্দ্রগুলি বন্ধ ছিল। লক্ষ্মীপুজোর পরে, আবার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আলুর দাম হু-হু করে বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রগুলিতে লম্বা লাইন পড়ছে ক্রেতাদের। কালনার চকবাজারে একটি শিবিরের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রদীপ দত্ত নামে এক যুবক বলেন, ‘‘আমার আগে আরও প্রায় দু’শো জন রয়েছেন। দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে। শিবিরের সংখ্যা বাড়লে ভিড় কমবে।’’

কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত জেলায় প্রায় দেড় হাজার কুইন্টাল আলু বিক্রি করা হয়েছে। পুজোর পরে পূর্ব বর্ধমানের মজুত আলু পশ্চিম বর্ধমান, কোচবিহার, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, বীরভূম, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার জেলায় পাঠানো হচ্ছে। জলপাইগুড়ি ও পুরুলিয়াতেও আলু দেওয়ার কথা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই সব জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন আলু পাঠিয়েছে পূর্ব বর্ধমান কৃষি বিপণন দফতর। গড়ে প্রতিটি জেলা প্রতিদিন ২৫০ কুইন্টাল করে আলুর বরাত দিচ্ছে বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

তবে কৃষি বিপণন দফতরের কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের দাবি, কম লোকবল নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হয়। ক্রেতাদের যে আলু বিক্রি করা হয়, তা প্রথমে হিমঘরের শেডে বার করে শুকিয়ে নিতে হয়। প্রতিটি শেডে নির্দিষ্ট পরিমাণ আলু শুকোনোর কাজ করা যায়। ফলে, জেলার কেন্দ্রগুলিতে বিক্রি এবং ভিন্‌-জেলায় আলুর জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ক্রেতাদের একটি বড় অংশের দাবি, সহায়ক মূল্যে কেনা মজুত আলু বাজারজাত করার জন্য অগস্ট থেকে জেলা পরিষদ, প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ীরা বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে। তখন থেকে ধীরে-ধীরে আলু বাজারে পাঠালে এখন জ্যোতি আলুর দাম ৪০ টাকায় পৌঁছত না। যদিও কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের দাবি, তখন আলু বাজারে পাঠালে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাজারে আলুর ঘাটতি তৈরি হত। মজুতদারেরা আলুর দাম আরও বাড়িয়ে দিতেন। সরকারি মূল্যে আলু বিক্রি শুরু হওয়ায় কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে দাম কমতে শুরু করবে বলে তাঁদের আশা।

বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মূল্যায়ন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অনেকেই সুযোগ নিয়ে আলু-পেঁয়াজ মজুত করছে। তার ফলে, আলুর দাম বেড়ে চলছে। যা উদ্বেগের। জেলা প্রশাসনকে তাঁর নির্দেশ, বাজার ঘুরে কোন-কোন ব্যবসায়ী আলু-পেঁয়াজ মজুত করছেন, তার তালিকা তৈরি করতে হবে। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন জানায়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো কাজ হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

fair price shop Poato Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE