Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Durgapur Chemicals Secondary School

কেমিক্যালস স্কুলে ছাত্রছাত্রী ১৩৫ জন, প্রশ্ন পরিকাঠামো নিয়েও

ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) ছন্দা রায় জানান, এই মুহূর্তে স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা আট জন। এ বছর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৩০ জন পড়ুয়া।

Durgapur Chemicals Secondary School

বেহাল দুর্গাপুর কেমিক্যালস সেকেন্ডারি স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৭
Share: Save:

এক দশক আগেও স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল পাঁচশোরও বেশি। কিন্তু সময় গড়িয়ে, এখন সে সংখ্যাটা নেমে এসেছে ১৩৫ জনে। পাশাপাশি, স্কুলের পরিকাঠামোও একেবারেই ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ। এমনই অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুর কেমিক্যালস সেকেন্ডারি স্কুলটি নিয়ে। স্কুলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় প্রাক্তনী থেকে অভিভাবক, সকলেই।

১৯৬৩-তে রাজ্য দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড কারখানা তৈরি করে। তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় টাউনশিপ, রাস্তাঘাট, বাজার, দোকান। টাউনশিপ লাগোয়া এলাকায় রয়েছে রাতুড়িয়া, অঙ্গদপুর প্রভৃতি গ্রাম। টাউনশিপে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ স্কুল ভবনটি তৈরি করেন। ১৯৮০-র ৬ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণি দিয়ে চালু হয় স্কুল। শুরুতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একটি আলাদা প্রাথমিক স্কুল ছিল। পরে, ওই স্কুলটিকে নতুন স্কুলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। শুরুর দিকে স্কুলটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কেমিক্যালস কারখানার প্রশাসনিক আধিকারিক। ১৯৮৪-তে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্কুলটিকে স্বীকৃতি দেয়। সে বছর থেকে স্কুলটিতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অন্য পরিকাঠামোগত খরচ
সম্পূর্ণ ভাবে জুগিয়েছেন কেমিক্যালস কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০-এর ১ এপ্রিল স্কুলটি ‘গ্র্যান্ট-ইন-এইডে’র আওতায় আসে। কিন্তু ২০১৬-য় রাজ্য কারখানাটি বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৯-এ কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়।

এর পরে থেকেই টাউনশিপ, স্কুলের অবস্থা পড়তির দিকে বলে অভিযোগ। বেহাল ভবন। ছাদের চাঙড় খসে পড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েক মাস আগে ভেঙে পড়েছে স্কুলের দরজা। তার পরে আর সেই দরজা সারাই করা হয়নি। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, অবাধে গবাদি পশু স্কুলের ভিতরে ঢুকে যায়। শুরু হয়েছে চুরি। স্কুলের নলকূপের হাতল নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, বহিরাগতদের অসামাজিক কাজকর্ম করতেও দেখা যায় স্কুল ভবনে। স্কুলের গ্যারাজের চাল ভেঙে পড়েছে। সেখানেই চলে মিড-ডে মিল রান্নার কাজ। এই পরিস্থিতিতে স্কুলটি নিয়ে মনখারাপ প্রাক্তনীদেরও। ১৯৯০-এ এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছিলেন প্রবীর মণ্ডল। তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলে খুবই ভাল পড়াশোনা হত। বছরভর ২৫ বৈশাখ, সরস্বতী পুজো, শিক্ষক দিবস, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-সহ নানা অনুষ্ঠানও হত। সেই স্কুলের বর্তমান অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পাই। জানি না, আগামী দিনে
কী হবে।”

ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) ছন্দা রায় জানান, এই মুহূর্তে স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা আট জন। এ বছর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৩০ জন পড়ুয়া। এই পরিস্থিতিতে স্কুল নিয়ে চিন্তায়ছন্দা। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, এইপরিস্থিতিতে স্কুলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, পরিকাঠামো বেহাল হওয়ায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নেই। ফলে, পঠনপাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। তৃতীয়ত, কারখানাবন্ধ হওয়ায়, জৌলুস কমেছে এলাকার।চতুর্থত, এলাকায় ইংরেজিমাধ্যম বেসরকারি স্কুলগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারছে কি না এই স্কুল, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।

এই পরিস্থিতিতে ছন্দার অভিযোগ, “সব জায়গায় লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। এখনও কোনও কাজ হয়নি।” চেষ্টাকরেও সোমবার রাত পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া মেলেনি জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুনীতি সাঁপুইয়ের।

স্কুলের এই অবস্থা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত, সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার থেকে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী, সকলেই এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য
সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। যদিও, বিরোধীদের বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতিউত্তম মুখোপাধ্যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy