Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
সালানপুর

অজয় ফুঁসছেই, জল সরলেও আতঙ্কে গ্রাম

আগের দিন দুপুরেই হঠাৎ জল ঢুকে পড়েছিল এলাকায়। রাস্তাঘাট, মাঠ, এমনকী সেতুও চলে গিয়েছিল জলের তলায়। রাত কাটার পরে জল নেমে গিয়েছে। কিন্তু অজয়ের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আতঙ্ক কাটেনি চিত্তরঞ্জন লাগোয়া কুশভেদিয়া ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের।

ভরা অজয়ে চলছে মাছ ধরা। চিত্তরঞ্জনে সিধো-কানহু সেতুর তলায় শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

ভরা অজয়ে চলছে মাছ ধরা। চিত্তরঞ্জনে সিধো-কানহু সেতুর তলায় শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

আগের দিন দুপুরেই হঠাৎ জল ঢুকে পড়েছিল এলাকায়। রাস্তাঘাট, মাঠ, এমনকী সেতুও চলে গিয়েছিল জলের তলায়। রাত কাটার পরে জল নেমে গিয়েছে। কিন্তু অজয়ের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আতঙ্ক কাটেনি চিত্তরঞ্জন লাগোয়া কুশভেদিয়া ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। প্রশাসনের তরফে সোমবার নজরদারি চালনো হয়। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকা হচ্ছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

জেলার সব নদ-নদী লাগোয়া এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। তার সঙ্গে মাইথন থেকে প্রচুর জল ছাড়ায় সালানপুর ব্লকের বরাকর নদ লাগোয়া কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা বেশ চিন্তায় ছিলেন। এলাকাবাসী জানান, চিত্তরঞ্জনের গা ঘেঁষে যাওয়া অজয় রবিবার সকাল থেকে ফুঁসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জল ঢুকতে শুরু করে। এলাকার শেষ প্রান্তে সিধো-কানহু সেতুর উপর দিয়েই জল বইতে শুরু করে। ওই এলাকা রেলের সংরক্ষিত অঞ্চল। সেখানে পাহারায় থাকা আরপিএফ কর্মী বিএন রজক বলেন, ‘‘সময় পেরোনোর সঙ্গে দেখি, আশপাশের রাস্তা, মাঠ সব জলে ভরে গিয়েছে। প্রচণ্ড জলের তোড় ধাক্কা দিচ্ছে সেতুতে। মনে হচ্ছিল সেতু ভেঙে ফেলবে। বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সারা রাত জেগেই কাটিয়েছি।’’

এলাকার বাসিন্দারা জানান, ২০০০ সালে এখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। গোটা এলাকা জলে ভরে গিয়েছিল। রবিবার দুপুরে জল ঢুকতে দেখে তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত মণ্ডল বলেন, ‘‘অজয়ের জল বাড়তে থাকায় ১৫ বছর আগের আতঙ্ক চেপে বসে। নিরাপদ জায়গায় চলে গিয়েছিলাম।’’ তাঁরা জানান, সোমবার ভোর থেকে জল নামতে শুরু করে।

অজয়ের পাড় ধরে খানিকটা ভিতরে রয়েছে কুশবেড়িয়া গ্রাম। রবিবার রাতে তার শেষ প্রান্তেও জল ঢুকেছিল বলে বাসিন্দারা জানান। অজয়ের পাড় লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা রাতে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। ভোরে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা দ্বিজপদ গড়াই বলেন, ‘‘ভাবছিলাম ২০০০ সালের পরিস্থিতি আবার বুঝি ফিরে এল। সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। তবে ভোরে জল নেমে গেলে স্বস্তি ফেরে।’’

সালানপুর বরাকর নদ লাগোয়া এলাকায় সতর্কতা রয়েছে। মাইথন থেকেও জল ছাড়ায় রবিবার আতঙ্কে ছিলেন বৃন্দাবনি, ধাঙ্গুরি, বাথানবাড়ি, কালীপাথর এলাকার বাসিন্দারা। তবে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় জল জমলেও সোমবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল গ্রামগুলিতে। তবে বাসিন্দাদের দাবি, মাইথন থেকে জল ছাড়া আরও বাড়লে কিছু অঞ্চল জলমগ্ন হবে। খেত-খামারে জল ঢুকে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা জাল ফেলে মাছ ধরছেন।

সালানপুরের বিডিও প্রশান্ত মাইতি বলেন, ‘‘এখনও উদ্বেগের কিছু নেই। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘কুশবেড়িয়া ও সিধো-কানহু সেতু এলাকায় সামান্য জল ঢুকেছিল। ত্রাণের জিনিসপত্র ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল তৈরি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে সময়ে পৌছবে।’’

শনিবার রাত থেকে খড়ি নদীর জল ঢুকে ডুবে গিয়েছিল বুদবুদের নানা এলাকা। সোমবার সেখানে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে। জল অনেকটাই সরে গিয়েছে। তবে বৃষ্টিতে বুদবুদের চাকতেঁতুল গ্রামে এক জনের বাড়ি ধসে গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয়ে জল এখন বিপদসীমার নীচে রয়েছে। কাঁকসা ও আউশগ্রাম ২ ব্লক প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সতর্কবার্তা থাকা এলাকায় পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আউশগ্রাম ২ বিডিও দীপ্তিময় দাস জানান, প্রত্যেক এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। ত্রাণেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Flood Flood panic Asansol rain ajay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy