ধোঁয়ার মধ্যে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকল কর্মী। নিজস্ব চিত্র
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় সবে ঢুকতে শুরু করেছেন গ্রাহকেরা। অফিসার-কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। এমন সময়ে হঠাৎ ‘সার্ভার রুম’-এ শব্দ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় ব্যাঙ্ক। আতঙ্কে হুড়মুড়িয়ে ব্যাঙ্ক থেকে সবাই নীচে নেমে আসেন। তবে ছাদে আটকে গিয়েছিলেন ওই ভবনের তিন তলায় থাকা বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখার এক কর্মী। প্রায় ৪০ মিনিট পরে, দমকল কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন।
মঙ্গলবার সওয়া ১১টা নাগাদ বর্ধমান শহরের জিটি রোডের উপর ভাঙাকুঠিতে ওই অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ভিতরের আসবাবপত্র-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। তবে লকার ও ভল্ট সুরক্ষিত রয়েছে বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি। দমকলের তিনটে ইঞ্জিন প্রায় ৫০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, “পুলিশ ও দমকল খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিল। দমকল দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছে। সবাই নিরাপদে ও সুস্থ রয়েছেন। দমকলের কাছ থেকে রিপোর্ট নেওয়া হবে।’’ দমকলের ওসি (বর্ধমান) ভাস্কর পাল বলেন, “৫০ ফুটের মধ্যে পেট্রল পাম্প। ব্যাঙ্কের পিছনে বসতবাড়ি রয়েছে। সে জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে তিনটে ইঞ্জিন ব্যবহার করে ৫০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়েছে। ছাদে আটকে থাকা বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্মীকেও উদ্ধার করা হয়েছে।’’
পুলিশ ও দমকলের প্রাথমিক ভাবে অনুমান, ব্যাঙ্কের ‘সার্ভার রুমের’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে ‘শর্ট সার্কিট’ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে। তদন্তের জন্য ব্যাঙ্ক আপাতত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে দমকল।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি ছোট ও একটি বড় ইঞ্জিন দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন দমকল কর্মীরা। জিটি রোডের স্টেশনমুখী লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্য লেনেও মানুষের ভিড় থাকায় গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর দাবি, “সওয়া ১১টা নাগাদ ব্যাঙ্কের নীচে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে আগুনের ঝলক দেখা যায়। তার পরে একটি শব্দ শোনা যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গলগল করে ব্যাঙ্ক থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে।’’
ওই ব্যাঙ্কের কর্মী আনন্দ দাসের দাবি, “তখন হাতে গোনা গ্রাহকেরা দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময়ে ‘সার্ভার রুম’-এর এসি থেকে বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ পাই। পোড়া গন্ধ পেয়ে সার্ভার রুমের দরজা খুলতেই দেখি, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাঁচ বার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কাজ হয়নি। পাশে থাকা দমকল কেন্দ্রে খবর দেওয়া হয়। সমস্ত রকম বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিই। ততক্ষণে কালো ধোঁয়ায় ঘর ভরে গিয়েছিল। ফায়ার অ্যালার্ম বাজতেই আমরা নীচে নেমে যাই।’’
ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের উপরে থাকা বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখার কর্মীদের দাবি, তাঁরা ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ শুনতে পাননি। ফলে, আগুন লেগেছে সেটা অনেক পরে বুঝতে পারেন। চার দিকে ধোঁয়া দেখে তাঁরা সবাই কোনও রকমে নামেন। এ দিকে ছাদে থাকা এক কর্মী প্রায় ৪০ মিনিট ধরে আটকে ছিলেন। পরে, দমকল তাঁকে উদ্ধার করে।
ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কে কাজে এসেছিলেন কলকাতার বেগবাগানের বাসিন্দা শেখ নুর নবি। তাঁর দাবি, “ধোঁয়া দেখে আমিই বেসরকারি ব্যাঙ্কের ভিতরে খবর দিয়েছিলাম। নীচে এসে দেখি, দমকল তখনও আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেনি। আমি একটা উঁচু জায়গায় উঠে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাচের জানলা প্রথমে ভাঙি। দমকল কর্মীদের কাছে থাকা ‘ওয়াটার গান’ নিয়ে ভিতরে জল দিই।’’
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ইয়াফত বেক ও ক্যাশিয়ার সায়ন কোনারের দাবি, “২০০৬ সালে ব্যাঙ্কের শাখা এখানে চালু হয়। ওই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র মাত্র দু’বছরের পুরনো। দু’মাস আগেই ‘সার্ভিস’ করানো হয়েছে। আবার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটিও এক মাস আগে দেখানো হয়েছে।’’ তার পরেও কী ভাবে এমন বিপর্যয় হল, তা ভেবে পাচ্ছেন না বলে দাবি তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy