ভেঙে পড়া ‘ফলস্ সিলিং’-এর নীচ দিয়েই বার হচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, রয়েছে পুলিশও। নিজস্ব চিত্র
ব্যবধান মাত্র পাঁচ মাসের। তার মধ্যেই আবার দুর্ঘটনা বর্ধমান স্টেশনের মূল প্রবেশদ্বারের ভবনে। ইট-পাথরের চাঙড় না খসলেও, নতুন ভাবে তৈরি ভবনে রবিবার সকালে ‘ফল্স সিলিং’ ভেঙে পড়ার ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে নানা পক্ষ। চেহারা একই রকম রেখে দু’মাসের মধ্যে ভবনটি নতুন ভাবে গড়ে তোলায় রেলকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন অনেকেই। এ দিনের ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষায় নজর নিয়ে।
এ দিন দুপুরে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী জানান, বিশদ রিপোর্ট নবান্নে পাঠানো হয়েছে। যদিও গাফিলতির অভিযোগ রেলের কর্তারা মানতে চাননি। ডিআরএম (হাওড়া) ঈশাক খানের বক্তব্য, ‘‘ঘটনাস্থলে বর্ধমানের ইঞ্জিনিয়ারেরা রয়েছেন। তাঁরা আমাকে জানিয়েছেন, কোনও সমস্যা নেই। তা সত্ত্বেও ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারকে (২) ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। পরিদর্শনের পরে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তা পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’’ ঘটনায় কারও আহত হওয়ার খবর তাঁদের কাছে নেই বলেও দাবি রেল-কর্তাদের। যদিও জেলা পুলিশের দাবি, ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনে কেরল থেকে বর্ধমান স্টেশনে আসা এক যুবক আহত হয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আহত যুবকের নাম সামিউল মণ্ডল। নাদনঘাটের সোনাপুরি গ্রামের বাসিন্দা সামিউল মাস আটেক আগে কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। বর্ধমান স্টেশনে ট্রেনটি ঢোকার পরে ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’ করার সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তিনি বাসে বাড়ির দিকে রওনা দেন। জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই এলাকাটি ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকেরা সেখান দিয়ে আসতে না পারেন।’’ এ দিন ঘটনার পরেই স্টেশনে ছুটে যান মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) পুষ্পেন্দু সরকার, ডিএসপি (বর্ধমান সদর) শৌভিক পাত্র। বর্ধমান পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর খোকন দাসের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন বিদায়ী কাউন্সিলরও পৌঁছন।
নিজেদের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে ‘কমিউনিটি হেল্থ ওয়ার্কার অফিসার’ জয়া শর্মা, স্বাস্থ্যকর্মী সুপর্ণা মুখোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘আমরা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’ করছিলাম। কেরল থেকে শ্রমিকদের ট্রেন ঢোকায় ভিড় ছিল। এমন সময়ে ধুপ করে আওয়াজ হয়। আমাদের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবকের মাথায় পড়ে ‘ফল্স সিলিং’। ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম। কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পরে আহত যুবকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।’’ সেই সময়ে তাঁরা ঘটনাস্থলের একদম কাছে ছিলেন জানিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক কাটোয়ার পাপাই মজুমদার, পূর্বস্থলীর রাজিবুল শেখরা বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে কেরলে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেঙে পড়া বর্ধমান স্টেশনের ছবি দেখেছিলাম। আজকের ঘটনার পরে সেই দৃশ্যটাই চোখে ভাসছে। বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেলাম!’’
সংস্কারের তিন মাস পরেই নতুন ভবনের ছাদ থেকে ‘জল চুঁইয়ে’ কী ভাবে ‘ফল্স সিলিং’-এ ঢুকল, রেল-কর্তারা তার সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলকর্মীদের একাংশের দাবি, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে টাইলস বসানো ছাদের কোন থেকে জল চুঁইয়ে ভিতরে ঢুকতে পারে। স্টেশনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অল্পের উপর দিয়ে রেহাই মিলল!’’
গোটা ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। জানুয়ারিতে ভবনের ঝুল বারন্দার একাংশ ভেঙে পড়ে এক জনের মৃত্যুর পরে রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এ দিনও অভিযোগ করেন, ‘‘এটা রেলের ব্যর্থতা। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। রেলের গাফিলতিতে এক শ্রমিক আহত হলেন। ফের বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল বর্ধমান। ঐতিহ্যবাহী এই স্টেশনের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে রেলের এত অবহেলা কেন?’’ বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দী শুধু বলেন, ‘‘রেলকে তদন্ত করে দোষী সংস্থার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy