ছবি: সংগৃহীত
দেশের ভূগর্ভস্থ জলস্তরের রিপোর্ট তৈরি করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর (সিজিডব্লিউবি) সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, জেলার পাঁচটি ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ‘বিপজ্জনক’ বা ‘ক্রিটিকাল’ অবস্থায় রয়েছে। যদিও, ২০১১-র রিপোর্টে এগারোটি ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলস্তর ‘সেমি ক্রিটিকাল’ বা আংশিক বিপজ্জনক ছিল। এই পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহারে এখনই সচেতনতা জরুরি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, সিজিডব্লিউবি-র ওই রিপোর্টে ভাতার, মন্তেশ্বর, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ১ ও মেমারি ২ ব্লকের অবস্থা ‘বিপজ্জনক’ বলা হয়েছে। তবে ওই রিপোর্ট এ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনেনি রাজ্য সরকার। অতিরিক্ত জেলাশাসক হুমায়ুন বিশ্বাসও বলেন, “আমাদের জেলায় সেমি ক্রিটিকাল ব্লক থাকলেও ক্রিটিকাল ব্লক নেই।’’
‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেট’ (সুইড) সূত্রে জানা যায়, ২০১১-র রিপোর্ট ২৯ জুলাই ২০১৭ সালে প্রকাশ করা হয় (মেমো নম্বর ৪৬৩)। বছর ঘোরার পরে অগস্টে তা ‘অসম্পূর্ণ’ বলে তুলেও নেওয়া হয়। ওই রিপোর্টেই রাজ্যের ৭৬টি ‘আংশিক বিপজ্জনক’ ব্লকের ১১টি ছিল পূর্ব বর্ধমানের। সেখানে ওই পাঁচটি ব্লকের সঙ্গে নাম ছিল কাটোয়া ১ ও ২ ব্লক, কেতুগ্রাম ২, কালনা ২, রায়না ১ ও ২ ব্লকগুলির। ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে, কাটোয়া মহকুমার পাঁচটি ব্লকেরই জলস্তর হু হু করে নামছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, কাটোয়া ১-এ ৯০ মিটার, রায়না ১, ২ ও মন্তেশ্বরে ১২৫ মিটার, কালনা ২-এ ১২১ মিটার করে জলস্তর নেমেছে। ভাতার, মঙ্গলকোটে জলস্তর নেমেছে ৫০ মিটার নীচে।
এক-এক ব্লকে জলস্তর নামার এমন তারতম্য প্রসঙ্গে সিজিডব্লিউবি-র এক সদস্যের দাবি, “কতটা জল তোলা হচ্ছে, আর কতটা জল মাটির ভিতরে যাচ্ছে তা নিয়ে বছরে দু’বার সমীক্ষা করে সুইড। তার পরে নির্দিষ্ট সময় ধরে ওই সমীক্ষা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার পরে যে সব ব্লকে ক্রমাগত জলস্তর নামতে দেখা যায়, সেই সব ব্লককে ক্রিটিকাল বা বিপজ্জনক, যে সব ব্লক ভূগর্ভস্থ জলস্তর ওঠানামা করে, সেই সব ব্লককে সেমি ক্রিটিকাল বা আংশিক বিপজ্জনক বলা হয়। তাই জলস্তর পাওয়ার ক্ষেত্রে এক-এক ব্লকে নানা রকম চিত্র উঠে আসে।’’
জলস্তরের এই পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক, তা নিয়ে পরিবেশকর্মীরা ফের সরব হয়েছেন। তাঁরা জানান, কালনা ১ ও ২, পূর্বস্থলী ১ ও ২, কাটোয়া ২ ব্লকে আগেই দেখা গিয়েছে, আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিক ছিল না। এখন ফ্লোরাইডও মিলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন ধরনের খনিজের মধ্যে মিশে থাকা রাসায়নিক ফ্লোরাইড ভূগর্ভস্থ জলের মধ্যে মিশে অতিরিক্ত পরিমাণে মানবদেহে ঢুকলে নানা রোগ হয়। ক্ষতি হয় হাড়, দাঁত, কিডনি, লিভারের। শারীরিক বিকৃতিও হতে পারে। ঠিক সময়ে জল পরিবর্তন না করলে জীবনভর পঙ্গুত্বেরও আশঙ্কা থাকে। অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে ফ্লোরাইড মায়ের শরীরে ঢুকলে গর্ভস্থসন্তানের ক্ষতি হয়।
জলস্তরের এই পরিস্থিতি কেন, সে বিষয়টি নিয়েও ফের চর্চা শুরু হয়েছে। জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, দুই বর্ধমানে প্রায় ৪১ হাজারের কাছাকাছি সাব-মার্সিবল ও গভীর নলকূপ রয়েছে। ফলে, যথেচ্ছ ভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হলেও মাটির তলায় জল পাঠানোর মধ্যে ‘ভারসাম্য’ বজায় থাকে না। ‘সুইড’-এর জিওলজিস্ট সুজিত প্রামাণিক বলেন, “নিরাপদ ব্লকের বাইরে মাটির তলা থেকে জল তুললে আমাদের অনুমতি নিতেই হবে। বিদ্যুৎ দফতরও আমাদের অনুমতি ছাড়া সংযোগ দেবে না। আর শিল্পের জন্য জল তুলতে হলে অনুমোদন নিতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy