ডায়ালিসিস কেন্দ্রের সরঞ্জাম। নিজস্ব চিত্র
এ বছরের শুরুতেই পিপিপি-মডেলে (পাব্লিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) পূর্ণ সময়ের জন্য ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’ চালু হওয়ার কথা ছিল। যন্ত্রপাতিও চলে এসেছিল। কিন্তু জল শোধনের ব্যবস্থা কোথায় হবে, সেই জটেই কাজ আটকে ছিল কয়েক মাস। দিন কয়েক আগে নেফ্রোলজিস্ট কানাইলাল কর্মকারের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কাছে ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’–এর জায়গা দেখে গিয়েছেন। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহার দাবি, “আশা করছি, পুজোর আগেই ২০ শয্যার ডায়ালিসিস ইউনিট চালু হয়ে যাবে।’’ কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালেও শীঘ্রই পাঁচ শয্যার ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’ শুরু হতে চলেছে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের আশ্বাস।
বর্ধমান মেডিক্যালের ‘ডায়ালিসিস’ পরিষেবা নিয়ে বরাবরই ক্ষুব্ধ রোগীর পরিজন থেকে চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এক যুগ আগে ছটি যন্ত্র নিয়ে ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’ চালু হয়। শুরুতেই একটি যন্ত্র খারাপ হয়ে যায়। তারপর থেকে পাঁচটি যন্ত্রে কাজ চলছিল। কিছু দিন পরে আরও দু’টি যন্ত্র খারাপ হয়ে যায়। বাকি তিনটিও মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়। চিকিৎসকদের দাবি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ওই সব যন্ত্রের এই হাল। তার উপর ঠিকমতো জল শোধন না হওয়ায় সমস্যা বাড়ে, দাবি তাঁদের। ফলে, দীর্ঘ দিন ধরে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, এমন রোগীর ‘ডায়ালিসিস’ হাসপাতালে করানো হয় না। চিকিৎসকদের দাবি, ওই সব রোগীর ন্যূনতম চার ঘণ্টা ‘ডায়ালিসিস’ প্রয়োজন। সেই পরিকাঠামো এই হাসপাতালে নেই। এখানে অস্ত্রোপচার চলাকালীন কিডনির আপৎকালীন সমস্যা মেটানো ও সাপে কাটা রোগীদের সুস্থ করতে ন্যূনতম সময়ের জন্যে ‘ডায়ালিসিস’ দেওয়া হয়। তার পরেও মাঝেমধ্যেই ‘ডায়ালিসিস’ দিতে না পারার জন্য সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।
সমস্যা মেটানোর জন্য আড়াই বছর আগে তৎকালীন হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ নতুন ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’ তৈরিতে উদ্যোগী হন। স্বাস্থ্য ভবনে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়ে জানানো হয়, কিডনির রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম, ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’ খুলেছে। সাধারণ রোগীদের জন্য ‘পিপিপি’ মডেলে হলেও, হাসপাতালে ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’ তৈরি হোক। প্রয়োজনে হাসপাতাল ২০ শয্যার ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’-এর জন্যে দু’হাজার বর্গফুট জায়গা, প্রতিদিন ৪৮ হাজার লিটার জল শোধনের ‘প্ল্যান্ট’-সহ অন্য পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে এ কথাও জানানো হয়। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন মেলে। একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়, ওই সংস্থা ১৮টি সাধারণ যন্ত্র ও দুটি ‘সিসিইউ’-তে (ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট) ভর্তি রয়েছে এমন রোগীদের জন্যে বিশেষ যন্ত্র (স্লেট) রাখবে। এ ছাড়া, চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত কর্মী থাকবেন। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ওই ‘ইউনিট’ চালু করা হবে। জানা গিয়েছে, বর্ধমানের বেসরকারি জায়গায় ‘ডায়ালিসিস’ করাতে প্রতিবার বারোশো টাকা মতো লাগে, সেখানে হাসপাতালে ৭১০ টাকা নেওয়া হবে।
কিন্তু যন্ত্র এলেও জল শোধনের ‘প্ল্যান্ট’ কোথায় হবে, তা নিয়ে বিপাকে পড়ে যান কর্তৃপক্ষ। বেশ কয়েকটি জায়গা বাছা হলেও প্রযুক্তিগত কারণে তা বাতিল করতে হয়। পরে ক্যান্টিনের কাছে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়। ডেপুটি সুপার বলেন, “২৪ ঘণ্টা ওই ইউনিট চালু থাকবে। দুঃস্থ রোগীদের জন্যও আমাদের ভাবনা রয়েছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, একই পদ্ধতিতে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালেও পাঁচ শয্যার ‘ডায়ালিসিস ইউনিট’ চালু হচ্ছে। সেখানেও যন্ত্র চলে এসেছে। ঘরের সমস্যা ছিল, তা মিটেছে। ওই হাসপাতালের সুপার রতন শাসমল বলেন, “বেসরকারি সংস্থার হাতে সোমবারই ঘর তুলে দিয়েছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি ডায়ালিসিস ইউনিট চালু হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy