—প্রতীকী চিত্র।
শাসকের ‘বাধা’, নাকি বিরোধীদের ‘ব্যর্থতা’— কী কারণে থমকে গ্রামের উন্নয়ন, উত্তর চায় পলাশন, ঝাউডাঙা। পূর্ব বর্ধমানের এই দুই পঞ্চায়েত এখন বিরোধীদের দখলে। রায়না ১ ব্লকের পলাশন পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় সিপিএম। পূর্বস্থলীর ঝাউডাঙা রয়েছে বিজেপির দখলে। উন্নয়নের কথা উঠলেই শাসক-বিরোধী চাপানউতোর শুরু হয়। সিপিএম ও বিজেপির অভিযোগ, উন্নয়নে ‘বাধা’ দেয় তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, বিরোধীদের ‘ব্যর্থতায়’ ওই দুই পঞ্চায়েতে উন্নয়ন অধরা থেকে গিয়েছে।
ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে গত সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া টাকার মাত্র ৪.৭১% খরচ করতে পেরেছে। পলাশন পঞ্চায়েত অবশ্য টাকা খরচের নিরিখে অনেক পঞ্চায়েতের থেকেই এগিয়ে। পরিসংখ্যান বলছে, এই পঞ্চায়েত গত আর্থিক বছরে পাওয়া অর্থের ৩২.৩২% খরচ করতে পেরেছে এখনও পর্যন্ত। বিরোধীদের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত ‘টুকটাক’ কাজ করা যাচ্ছিল। কিন্তু ভোটের ফলপ্রকাশের পরে প্রতি পদে শাসক দলের ‘বাধা’ আসছে।
প্রশাসনের এক কর্তা জানান, পঞ্চায়েতের কর্তাদের নিয়ে স্থানীয় স্তরে বৈঠক হয়েছে। তাদের অসুবিধা জানা হচ্ছে। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছেন ব্লকের আধিকারিকেরা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “পঞ্চায়েতের কাজে যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে, তবে প্রশাসন চাপ দিয়েও উন্নয়ন করতে পারবে না।” তৃণমূলের দখলে থাকাকালীন গত দুই অর্থবর্ষের বকেয়া বাবদ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন সিপিএম পরিচালিত পলাশন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। লোকসভা ভোটের আগে তারা টাকা খরচ করে নজর কেড়েছিল প্রশাসনের। গত অর্থবর্ষের টাকা খরচ করে উন্নয়নের একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে তারা।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিল থেকে পলাশন পঞ্চায়েত গত অর্থবর্ষে ৬২.৩৫ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। গত সপ্তাহ পর্যন্ত তারা খরচ করেছে, ২০.১৫ লক্ষ। হাতে রয়েছে ৪২.১৯ লক্ষ টাকা। পঞ্চায়েত প্রধান মনিকা কোনারের দাবি, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে তৃণমূল জমানার বকেয়া টাকাও পেয়েছিলাম। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকার কাজ করেছি। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল উন্নয়নের কাজে বাধা তৈরি করছে। প্রতিকূলতার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।” সিপিএম নেতা জাকরিয়া চৌধুরীর অভিযোগ, “তৃণমূলের লোকজন বোর্ডের সভা ভেস্তে দিতে চাইছে। বাধা তৈরির চেষ্টা করছে। এ সবই হল পঞ্চায়েত দখলের চেষ্টা!”
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত গত আর্থিক বছরে ২৭.৪৪ লক্ষ টাকা পেয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত খরচ করেছে মাত্র ১ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা! কেন এই হাল? বিজেপি পরিচালিত এই পঞ্চায়েতের প্রধান মধুমিতা চন্দ্র দে এর সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সোমা ঘোষের অভিযোগ, “নর্দমা তৈরি থেকে টিউবওয়েল বসানো, সবেতেই তৃণমূল বাধা দিচ্ছে। এমনকি জলের পাইপও বসাতে দিচ্ছে না। কাজের পরিবেশ নষ্ট করছে।”
কী বলছে রাজ্যের শাসক দল?
রায়নার তৃণমূল বিধায়ক শম্পা ধাড়া ও পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “ বিরোধীরা উন্নয়ন করতে পারছে না, আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। বরাদ্দে ঘাটতি নেই।”
গলসি ব্লকের সাঁকো পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছিলেন বিজেপির শিখা সাঁতরা। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তথ্য বলছে, এই পঞ্চায়েত ৪৩ লক্ষ ৯ হাজার টাকা পেলেও মাত্র ৩ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কেন? শিখার কথায়, “উন্নয়ন হবে বলে তৃণমূলে এলাম। কিন্তু তৃণমূলের অন্দরে এত মতবিরোধ যে, কাজই করতে পারছি না।” তাঁকে সমর্থন জানিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা চন্দ্রনাথ রায়ের বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েতের সদস্যদের মধ্যে মিল, সমন্বয়, পরিকল্পনা নেই। তাই কাজও ঠিক মতো হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy