খণ্ডঘোষের গ্রামে জমিতে দু’টি হাতি। শনিবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
জমিতে দু’টি হাতি ঢুকে পড়ার খবর পেয়ে ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করেই রাস্তায় জমায়েত করলেন বাসিন্দারা। শনিবার ভোরে বাঁকুড়া থেকে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে ঢুকে পড়ে হাতি দু’টি। খণ্ডঘোষের নিশ্চিন্তপুর, আলিপুর-সহ সাতটি গ্রামের জমিতে দাপিয়ে বেড়ায় সেগুলি। তাদের ফেরত পাঠাতে বন দফতরের ৭৫ জন কর্মী জমিতে নামেন। বিকেল ৩টে নাগাদ হাতি দু’টিকে বাঁকুড়ার ইন্দাসে পাঠানো গিয়েছে বলে বন দফতর ও খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ জানায়।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকে এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ খণ্ডঘোষে ঢোকে হাতি দু’টি। সে কথা চাউর হওয়ার পরে সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁকুড়া রোডে জমায়েত হতে থাকেন। সময়ের সঙ্গে ভিড় বেড়েছে। দুপুরে বাঁকুড়া রোডে দেখা যায়, গিজগিজ করছে মানুষ। তাঁদের অনেকে দাবি করেন, গত কয়েকদিন ধরে হাতে কাজ নেই। বাড়ির ছেলেরা ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে এসেছেন। এই অবস্থায় হাতি পাকা ধান নষ্ট করে দিচ্ছে শুনে পেটের টানে সবাই ছুটে এসেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খোরকোল-ময়ূরের কাছে দেবখাল পাড় হতে পারছিল না হাতি দু’টি। চার দিক থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। তখন মাঠে দাঁড়িয়ে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা ধরে নিশ্চিন্তে ধান খেতে থাকে তারা।
পুলিশের অবশ্য দাবি, রাস্তায় যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ হয়তো ধানের ক্ষতি হচ্ছে কি না দেখতে এসেছিলেন। বাকিরা স্রেফ হাতি দেখতেই বেরিয়েছিলেন। ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে। মাইকে সতর্কতার কথা প্রচারের পরেও ভিড় সরেনি। সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ব্যারিকেড করে জনতার মধ্যে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করা হয়। মাইকে বারবার বাড়ি চলে যাওয়ার করলেও বিশেষ ফল হয়নি বলে জানান পুলিশকর্মীরা। দুপুর দেড়টা নাগাদ হাতিগুলি বাঁকুড়ার দিকে ফিরতে শুরু করার পরে ভিড় কমতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে ধানের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে বন দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ নাসের, অনুপ রায়েরা দাবি করেন, ‘‘কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে চলতে হচ্ছে। কী খাব ঠিক নেই। এই অবস্থায় হাতিতে ধান খেয়ে নিল!’’ জেলা বনাধিকারিক দেবাশিস শর্মা বলেন, ‘‘একটি কমিটি গঠন করে কার কত ক্ষতি হয়েছে, খতিয়ে দেখা হবে। তার পরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’
বন দফতর সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বর্ধমান ও বাঁকুড়া বিভাগের বন দফতরের ৭৫ জন কর্মী হাজির হন। মশাল, বাজি নিয়ে তৈরি ছিল হুলা পার্টিও। তিন দিক দিয়ে ঘিরে ধরে হাতিকে বাঁকুড়ায় ফেরানোর চেষ্টা হয়। দুপুর ২টো নাগাদ ৯ নম্বর ক্যানালের বোলেরবাঁধে উঠে যাওয়ার পরে বনকর্মীরা নিশ্চিত হন, আর খণ্ডঘোষের দিকে ফিরবে না হাতি দু’টি। ৩টে নাগাদ ইন্দাসে ঢুকে পড়ে সেগুলি। দেবাশিসবাবু বলেন, “বাঁকুড়ায় ওই হাতি দু’টি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। খাবারের সন্ধানে মাঝেমধ্যে লোকালয়ে চলে আসে। চলার পথে জমি নষ্ট বা ধান খেলেও ঘর-বাড়ির কোনও ক্ষতি করেনি। সাধারণ মানুষজনও হাতি দু’টিকে খুব বেশি বিরক্ত করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy