আগুন: রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ। রবিবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
আগেও এক বার হামলা হয়েছিল তাঁর উপরে। তার পরেও কেন তাঁর নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া হল না, কাউন্সিলর খুনের ঘটনার পরে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেল এলাকার বাসিন্দাদের মুখে। শনিবার রাতে বরাকরের মনবেড়িয়ায় বাড়ির সামনে গুলিতে খুন হন পুরসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খালেদ খান (৪০)। তিন জনের নামে পুলিশে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। পুলিশ জানায়, টিঙ্কু খান নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে মনবেড়িয়া লাগোয়া রামনগরে একটি নৈশ ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে গিয়েছিলেন খালেদ। সেখান থেকে ফেরার পরে খাওয়াদাওয়া সেরে পায়চারি করার জন্য বাড়ির বাইরে বেরোন। তখন অল্পস্বল্প বৃষ্টি পড়ছিল। বাইরে লোকজন প্রায় ছিল না। অভিযোগ, তিন দুষ্কৃতী মোটরবাইকে চেপে এসে খালেদকে পরপর গুলি করে বরাকরের দিকে পালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তাদের মুখ ঢাকা ছিল না। তারা সম্ভবত ডুবুরডিহির দিক থেকে এসেছিল বলে অনুমান।
যে তিন জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তারা খালেদের আত্মীয়। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, রাতে বাইকে আসা আততায়ীদের মধ্যে দু’জন ঝাড়খণ্ডের ‘সুপারি কিলার’। তৃতীয় জন্য খালেদের পরিচিত কেউ। মৃতদেহ থেকে যে দু’টি গুলি মিলেছে তার একটি ৯ এমএম এবং অন্যটি পাইপগানের গুলি বলে জানায় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তবে সেটি দুষ্কৃতীদের কি না, তা নিশ্চিত নয়।
রবিবার সকালে ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষোভ শুরু হয় বরাকরের নানা এলাকায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ চলে। সকালে রামনগর রোড বন্ধ করে বিক্ষোভের সময়ে বাসিন্দাদের অনেকে অভিযোগ করেন, বছর চারেক আগেও এক বার খালেদের দিকে গুলি চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সে বার বেঁচে যান তিনি। রাতে কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে পুলিশি টহলের দাবি উঠেছিল তখন। গোড়ায় তা শুরু হলেও পরে শিথিল হয়ে যায় বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এর পরে বরাকর স্টেশন রোড অবরোধ করা হয়। ট্রেন থেকে নেমে অনেক যাত্রী ভয়ে স্টেশন ছেড়ে বেরোতে চাননি। সকাল ৯টা নাগাদ বেগুনিয়া মোড় অবরোধ ও বাজারের দোকানপাটে ঝাঁপ ফেলা হয়। পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ডের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অবরোধ-বিক্ষোভে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। তাঁদের হেনস্থা হতে হয় বলেও অভিযোগ। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলেন। দোকানপাট খোলা হয়। এডিসিপি অবশ্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে চাননি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, খুনের নেপথ্যে পুরনো পারিবারিক বিবাদ থাকতে পারে। রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে খালেদের পরিজনদের সান্ত্বনা দেন কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, অভিযুক্তদের মধ্যে যুব তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত এক জন রয়েছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়েরও অভিযোগ, ‘‘এটা তৃণমূলের অন্তর্কলহ, তা অভিযুক্তদের নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে। শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রায়ই এ রকম কিছু না কিছু ঘটছে।’’ উজ্জ্বলবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় জড়িতেরা যে-ই হোক, কোনও ভাবে রেয়াত করা হবে না। পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy