বুস্টার না নেওয়ায় চিন্তায় পশ্চিম বর্ধমান। — ফাইল চিত্র।
সাম্প্রতিক কোভিড-পরিস্থিতিতে রাজ্য ও কেন্দ্র একের পর এক নানা পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু এই আবহেই পশ্চিম বর্ধমান স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে সামনে এল ‘উদ্বেগজনক’ তথ্য। জানা গিয়েছে, যত জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়, তার মাত্র প্রায় ২২ শতাংশ নাগরিক বুস্টার ডোজ়টি নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্তারা বুস্টার ডোজ় নেওয়া এবং নাগরিক সচেতনতার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে জেলায় মাত্র এক জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু, লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, ২০ লক্ষ ৪২ হাজার ২৭৫ জনের টিকাকরণের। প্রথম ডোজ় নিয়েছেন ২০ লক্ষ ৪৪ হাজার ৩৭৪ জন, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় একশো শতাংশেরও বেশি। দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন ১৮ লক্ষ ২৫ হাজার ৪৮৬ জন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৭ শতাংশ। কিন্তু বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন চার লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৯৩ জন, যা লক্ষ্যমাত্রার ২২ শতাংশের কাছাকাছি।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, চিনে কোভিডের ‘বাড়াবাড়ি’ দেখা যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের যে উপরূপ চিনে নতুন করে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তার খোঁজ মিলেছে ভারতেও। ইতিমধ্যে চার জনের দেহে করোনাভাইরাসের ওই নতুন উপরূপের খোঁজ মিলেছে। সেটির নাম ওমিক্রন বিএফ.৭। তার পরেই দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়ের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। সূত্রের খবর, অধিকাংশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই জানাচ্ছেন, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ভারতবর্ষে। কিন্তু সতর্কতার ক্ষেত্রে কোনও রকম ঢিলে দেওয়া যাবে না। এ-ও জানা গিয়েছে, দেশে ৯০ শতাংশেরও বেশি নাগরিক কোভিড-টিকার দু’টি ডোজ় নিলেও বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন মাত্র ২৭ শতাংশ নাগরিক। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সে সঙ্গে, এ-ও বলেছেন, “যদি (কোভিড) আসে আমরা নিশ্চয়ই বলব, মাস্ক পরুন।” রাজ্যে করোনা নজরদারি কমিটিও তৈরি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকা জারি করে করোনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরিগুলিতে ‘জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের’ উপরে জোরদিতে বলেছে।
এমন এক আবহে, জেলার এই বুস্টার-পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। কিন্তু কেন এই অবস্থা? ইতিমধ্যেই কোভিড-টিকার দু’টি ডোজ় নিয়েছেন জেলার বাসিন্দা সুকান্ত চৌধুরী, কল্যাণ মণ্ডলেরা। সুকান্ত বলেন, “এত দিন জানতাম, ৬০ বছরের নীচে না কি বুস্টার ডোজ় দেওয়া যাবে না। তাই আর এ বিষয়ে খোঁজখবর করিনি।” ৬৮ বছরের কল্যাণের আবার প্রতিক্রিয়া, “সর্বত্র শুনছি, বুস্টার নেওয়া, না-নেওয়া একই ব্যাপার!” এমন বক্তব্য শুনে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শেখ মহম্মদ ইউনুসও বলছেন, “মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে একটা বেপরোয়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তাইএই পরিস্থিতি।”
যদিও, জেলা স্বাস্থ্য দফতর কোভিড মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে আসানসোল জেলা হাসপাতাল, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং জেলার আটটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ চলছে। তবে, ‘অনীহার’ কারণে কয়েক মাস আগেই ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সিদের টিকাকরণ বন্ধ করা হয়েছে। এই বয়সের জন্য আসা টিকার ডোজ়গুলি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, সর্বসাধারণের জন্য ৪,২৩০টি কোভিড টিকার ডোজ় মজুত রয়েছে জেলায়। কিন্তু মানুষ সে ভাবে আসছেনই না, পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্যকর্মীদের।
অথচ, বুস্টারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। রাজ্য সরকারের কোভিড মনিটরিং কমিটির পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, “বুস্টার না নেওয়াটা অত্যন্ত উদ্বেগের। এটা নেওয়া অবশ্যই দরকার। কারণ, এর ফলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়বে। দু’বছর পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে। ফলে, এটা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।” সে সঙ্গে, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জীবাণুনাশক ছড়ানোর মতো বিষয়গুলিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
পাশাপাশি, ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, সুকান্ত, কল্যাণের মতো নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া থেকে এ-ও মনে হচ্ছে, প্রশাসন কতটা জনসচেতনতা প্রচার করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যদিও, সিএমওএইচ বলেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে জনসচেতনতা প্রচারে ব্যবস্থা নেওযা হবে। নাগরিকদেরও আরও সচেতন হতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy