কুলটির রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র
নানা রঙে সাজানো এক্কাগাড়ি। লাল মখমলে মোড়া বসার গদি। ইদের সকালে নমাজ পাঠের শেষে এ বার সওয়ারি তুলে এমন একটিও ঘোড়ায় টানা এক্কাগাড়ি ছুটবে না শহরে। তাই মন ভার জনা পনেরো গাড়োয়ানের। তাঁরা জানান, ‘লকডাউন’-পর্বে তাঁরা কার্যত কপর্দকশূন্য। ঘোড়ার দানাপানি নেই। পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেও কালঘাম ছুটছে।
কুলটির পাতিয়ানা, খিলানধাওরা অঞ্চলে বাস করেন এই গাড়োয়ানেরা। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কারও আস্তাবলেই ঘোড়া বাঁধা নেই। বাড়ির উঠোন বা রাস্তার ধারে মুখ থুবড়ে পড়ে দু’চাকার এক্কাগাড়িগুলি। মহম্মদ কাশেম নামে এক গাড়োয়ান বলেন, ‘‘একদম ভাল নেই। ইদে বাড়তি দু’পয়সা রোজগার করব, সে পথও বন্ধ।’’ পাতিয়ানায় ঢোকার মুখে দেখা মিলল শহরের অন্যতম প্রবীণ গাড়োয়ান মহম্মদ সামসেরের সঙ্গে। শুকনো মুখে বসে রয়েছেন। বললেন, ‘‘গত প্রায় চার দশক ঘোড়ার গাড়ি চালাচ্ছি। এমন হাল আগে কখনও হয়নি।’’
মহম্মদ আতাউল্লা জানান, দানাপানি জোগাড় করা যাচ্ছে না। ফলে, বাধ্য হয়ে আস্তাবল থেকে ঘোড়াকে রাস্তায় বার করে দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ত্রাণ শিবিরের লাইনে দাঁড়াচ্ছি। ঘোড়া রাস্তায় চরে খাচ্ছে।’’ এই পরিস্থিতিতে ঘোড়াদের জন্য মন ভাল নেই গাড়োয়ান মহম্মদ ইকবালের। তিনি জানান, রাস্তায় ঘোড়াগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ছোলা মিলছে না। ফলে, সাধের ঘোড়াগুলি বেশ কমজোরি হয়ে পড়ছে, জানান গাড়োয়ানেরা। ইকবালের আক্ষেপ, ‘‘বাড়িতে খাবার নেই। রেশন থেকে যা মেলে তাতে কিছুই হয় না।’’
গাড়োয়ানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ষাটের দশক থেকে কুলটি, ডিসেরগড়, বেগুনিয়া, নিয়ামতপুরে ঘোড়ায় টানা গাড়ির চল শুরু হয়। মূলত কুলটি রেল স্টেশন থেকে নিউ রোড হয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে এগুলি। তবে, দুর্গা পুজো ও ইদের সময়ে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে শহর ঘোরার পুরনো রেওয়াজ রয়েছে কুলটিতে। এই সময়ে, তাই দু’পয়সা বেশি রোজগার হয় তাঁদের।
গাড়োয়ানেরা জানান, সাধারণ ভাবে এক-একটি গাড়িতে পাঁচ জন করে যাত্রী বসেন। ভাড়া নেওয়া হয় সাত টাকা করে। দুর্গা পুজো ও ইদের সময়ে অনেকে দু’-আড়াইশো টাকা দিয়ে গাড়ি রিজার্ভ করেন। উৎসবের মরসুমে ঘোড়া ও গাড়ি দু’টিই তাই তাঁরা সাজিয়ে তোলেন। কিন্তু এ বার সে সুযোগ নেই।
তবে, অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি জানান, কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ত্রাণ বিলি করা হচ্ছে। এলাকায় ত্রাণ পৌঁছনোর কথা জানান আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিও। কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘আমরা গাড়োয়ানদের পাশে রয়েছি।’’
এই পরিস্থিতিতে কবে আবার টগবগ করে ছুটবে এক্কাগাড়ি, সেই প্রতীক্ষায় গাড়োয়ানেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy