প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণের সময়ে বা তার পরে এক ধরনের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিশু। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম ইন চিলড্রেন’ (এমআইএসসি) নামে ওই রোগে শরীরের যে কোনও অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। দুর্গাপুরের গাঁধী মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সম্প্রতি ‘এমআইএসসি উইথ মায়োকার্ডাটিইস, রেনাল ফেলিওর অ্যান্ড অ্যাসপারজিলাস ফাঙ্গাস ইনফেকশন’-এ আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় বছর দু’য়েকের একটি শিশু, যা আরও জটিল বলে চিকিৎসকদের দাবি। ১৬ দিনের চিকিৎসায় তাকে সুস্থ করে তুললেন সেখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মে মাসের শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে বরাকরের অপূর্বী। দু’তিন দিন চিকিৎসা চলে বরাকরে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২৫ মে আসানসোলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জ্বর, সারা গায়ে লালচে ফুসকুড়ি, চোখ ফুলে গিয়ে বন্ধ হয়ে যা। চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হয়। তবে ১ জুন হার্ট, কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভর্তি করা হয় দুর্গাপুরের হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটি জ্বর ও তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২ জুন ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ও রক্তচাপ মাত্রাতিরিক্ত কম ছিল। আইসিইউ বিভাগে নিয়ে গিয়ে ‘হাই ফ্লো’ মেশিনে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। রক্তচাপ বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া হয়। করোনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে। প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়। হৃদযন্ত্র পরীক্ষা করে জানা যায়, সেটির পাম্প করার ক্ষমতা মাত্র ১৫ শতাংশ, যা আসলে ৬০ শতাংশ থাকার কথা। হৃদযন্ত্র ঠিকমতো পাম্প করতে না পারায় অক্সিজেন বৃক্কে পৌঁছচ্ছিল না। এর ফলে, বৃক্কও ঠিকমতো কাজ করছিল না। তাই প্রস্রাবের পরিমাণ খুব কমে যায়। শিশুটিকে ‘ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ (আইভিআইজি) প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরেও চিকিৎসকেরা দেখেন, জ্বর কিছুতেই কমছে না। পরীক্ষা করে দেখা যায়, শিশুটির ‘অ্যাসপারজিলাস ফাঙ্গাস ইনফেকশন’-এর রিপোর্টও ‘পজ়িটিভ’। চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন, শিশুটি ‘এমআইএসসি উইথ মায়োকার্ডাটিইস, রেনাল ফেলিওর অ্যান্ড অ্যাসপারজিলাস ফাঙ্গাস ইনফেকশন’-এ আক্রান্ত হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানান, ভর্তির প্রায় দু’সপ্তাহ পরে, ধীরে-ধীরে শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ১৮ জুন সে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। হাসপাতালের যে চিকিৎসক দল শিশুটির চিকিৎসা করেছে, তার অন্যতম সদস্য সৌম্যদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত এক বছরে হাসপাতালে এমআইএসসি আক্রান্ত প্রায় ৩০-৪০ জন রোগীর সফল চিকিৎসা হয়েছে। তবে এই শিশুটির মতো জটিল পরিস্থিতি এই প্রথম। কার্যত যমে-মানুষে টানাটানি চলেছে।’’ তিনি জানান, ভর্তির সময়ে শিশুটির ‘ল্যাকটেট রিডিং’-ও ছিল বিপজ্জনক মাত্রার। তবে চিকিৎসার পরে, এখন সে প্রায় সুস্থ। হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, নজরদারিও চলবে। তিনি বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ বা সংক্রমণ পরবর্তী সময়ে শিশুরা এই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। তাই সাধ্যমতো সচেতনতা ও সতর্কতা জরুরি।’’
হাসপাতালের ইডি (অ্যাডমিন) প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় আনা হয়েছিল শিশুটিকে। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তারেরা রাত-দিন চেষ্টা চালিয়ে শিশুটিকে বাঁচিয়ে তুলেছেন।’’ দুর্গাপুরের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আজিজুর রহমান বলেন, ‘‘এই রোগে ঠিক সময় চিকিৎসা শুরু হওয়া জরুরি। তা না হলে প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা থাকে। তাই সামান্য অসুবিধা বুঝলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।’’ পেশায় শিক্ষক শিশুটির বাবা অভিজিৎ ভকত বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আমার মেয়েকে প্রায় সুস্থ করে তুলেছেন। সোমবার প্রথমবারের মতো ‘ফলো আপ’ চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে যেতে হয়। ফের শুক্রবার যেতে হবে। মেয়ে এখন ভাল আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy