বন্ধ চালকল। নিজস্ব চিত্র।
দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত জমির ধান কিনে নেওয়া এক সময়ে কার্যত ‘দস্তুর’ ছিল চালকলগুলির। এ বছর সে ‘রীতি’ ধাক্কা খেতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে গলসির বিস্তীর্ণ এলাকায়। বেশ কয়েকবার চালকলের সামনে চাষিরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সোমবার থেকে চালকলের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভও শুরু হয়েছে। পাল্টা রাস্তায় নেমেছে চালকলও। সোমবারই ‘বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট রাইসমিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছে, চাষিদের অন্যায় আবদারের ফলে, ১৫টি চালকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ রকম চলতে থাকলে গলসি ১ ও ২ ব্লকে ৫০টি চালকল বন্ধ হয়ে যাবে। সহায়কমূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। জেলা প্রশাসনের তরফে মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর)-কে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
চারশোর উপরে চালকল রয়েছে পূর্ব বর্ধমানে। গলসি ছাড়া, কোথাও গোলমালের অভিযোগ ওঠেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গলসির একটা অংশের কিছু চাষি প্রতি বছর সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করা নিয়ে অশান্তি বাধান। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে আটকে বিক্ষোভ চলে। বেশ কয়েকবার মন্ত্রীদের গাড়িও আটকে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বছর প্রথম দিকে চাষিদের দাবি ছিল, সহায়ক মূল্যে ধান চালকলগুলিকে কিনতে হবে। চালকল মালিকেরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ধান কেনার ক্ষমতা তাদের নেই। জেলা প্রশাসনও জানায়, ‘সিপিসি’ বা ‘সেন্ট্রাল প্রোকিওরমেন্ট সেন্টার’-এ গিয়ে চাষিদের নিয়মনীতি মেনে ধান বিক্রি করতে হবে। খাদ্য দফতর জানিয়েছে, গলসিতে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ হাজার টন। সেখানে সহায়ক মূল্যে (কুইন্টাল প্রতি ১৮৬৮ টাকায়) ৩৭ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে।
পরবর্তীতে ওই চাষিরা ফের দাবি করেন, চালকলকেই তাঁদের উৎপাদিত ধান কিনতে হবে। আন্দোলনরত চাষি শেখ আলি আহম্মদ, মিন্টু শ্যামদের দাবি, ‘‘সহায়ক মূল্যে না হলেও প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট দামে চালকল লাগোয়া জমির ধান কেনার রীতি ছিল। এ বার সে রীতি মেনে চালকলগুলি ধান কিনতে চাইছে না। খোলা বাজারেও ধানের দাম নেই। আমাদের আন্দোলন করা ছাড়া, উপায় নেই।’’ তাঁদের অভিযোগ, চালকলের দূষণে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তৈরি কমিটিও সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।
চালকল মালিকদের সংগঠনের বর্ধমান জেলার কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘ওই রিপোর্ট মেনে প্রশাসন যা সিদ্ধান্ত নেবে, মেনে নেব। কিন্তু গায়ের জোর খাটিয়ে চালকলে ঢুকে সহায়কমূল্যে ধান নেওয়ার দাবি মানা যাবে না।’’ চালকল মালিকেরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষি উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে কবে, কোন চালকলে চাষিরা হামলা চালিয়েছেন, তার বিশদ তথ্য দেওয়া হয়েছে। ১২ জুন, শনিবার চাষিরা মিছিল করে এক দিনে ১৩টি চালকল বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে তাতে। চালকল মালিকদের দাবি, জেলায় ২৩ লক্ষ টন ধান উৎপাদন হয়। সরকার সহায়কমূল্যে কেনে পাঁচ লক্ষ টন। বাকি ধান খোলা বাজার থেকে কিনতে হয়। সে ধান কেনাও বন্ধ। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে গলসি এলাকায় ৫০টির মতো চালকল বন্ধ হয়ে যাবে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ামক আবির বালি বলেন, ‘‘আমরা গলসিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান কিনেছি। এখন গলসির সমস্যাটি একান্তই চাষি ও চালকলের মধ্যে রয়েছে। আমরা ওই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছি।’’ ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (খাদ্য) অনির্বাণ কোলে বলেন, ‘‘সমস্যা মেটানোর জন্য বর্ধমান উত্তরের মহকুমাশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy