খান্দরায় অবরোধ। নিজস্ব চিত্র Stock Photographer
তৃণমূলের বিরুদ্ধে চাপ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো, হুমকি দেওয়া, বাড়ি ভাঙচুর ইত্যাদি নানা অভিযোগ করল সিপিএম ও বিজেপি। ঘটনাস্থল মূলত পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর। পাশাপাশি, অভিযোগ উঠেছে অন্ডাল, রানিগঞ্জ-সহ জেলার নানা প্রান্তেই। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, এ দিন সকাল থেকে সালানপুর ব্লক অফিসের সামনে বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের ভাই মুকুল-সহ তৃণমূলের শতাধিক লোকজনকে দেখা যায়। দুপুরে তৃণমূল ব্লক অফিসের গেটে সবুজ আবির খেলে বিজয় উল্লাস করে। তৃণমূলের লোকজন দাবি করেন, বাসুদেবপুর, জেমারি পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে তাঁরা ছ’টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেলেন। সিপিএম ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ তুললে পুলিশ ব্লক অফিস থেকে তৃণমূলের লোকজনকে সরিয়ে দেয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “রবিবার সালানপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আমাদের প্রার্থীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দিয়েছে তৃণমূল।”
এ দিকে, সিপিএম সূত্রে খবর, সোমবার দিনের শেষে ১৫ জনকে হুমকি ও চাপ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে। দলের সালানপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক রঞ্জিত সরকার বলেন, “পরিবারের সদস্যদের উপরে চাপ সৃষ্টির জন্যই প্রার্থীরা বেশি ভয় পাচ্ছেন।” যদিও, সিপিএমের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা দুই প্রার্থী বিশাল বাউড়ি ও সরজিৎ মাজির কাছে হুমকি ও চাপের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, দু’জনেই বলেন, “তেমন কিছু হয়নি।” বিশালের সঙ্গে ছিলেন তাঁর শাশুড়ি তথা গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্য শিশু বাউড়ি। তাঁর অবশ্য বক্তব্য, “পরিস্থিতিঅনুকূল নয়।”
অভিযোগ মানেননি তৃণমূলের সালানপুর ব্লক সম্পাদক ভোলা সিংহ। তাঁর বক্তব্য, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। সিপিএম থানায় অভিযোগ করুক। পুলিশ ব্যবস্থা নিক।” সিপিএম জানিয়েছে, যাবতীয় অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাছে করা হয়েছে। বিডিও (সালানপুর) অদিতি বসুর বক্তব্য, “জমায়েতের বিষয়টি নজরে আসার পরেই তা সরিয়ে দেওয়া হয়। এলাকায় একটি রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিস খোলা ছিল। সেটিও বন্ধ করা হয়।” তবে সিপিএমের নালিশ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁর কাছে তেমন কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।
এ দিকে, সিপিএমের দামোদর অজয় উত্তর এরিয়া কমিটির সম্পাদক অঞ্জন বক্সীর অভিযোগ, দুপুরে বীরভূমের নম্বর-প্লেট দেওয়া গাড়িতে চেপে মুখে কাপড় বাঁধা প্রায় দশ জন বহিরাগত খান্দরা পঞ্চায়েতের বিশ্বেশ্বরী কোলিয়ারি এলাকায় দলের তিন প্রার্থী রমানাথ দত্ত, নিতা দত্ত ও অপর্ণা সহিসের বাড়িতে চড়াও হয়। তিন জন বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে গিয়ে মোটরবাইক ও আসবাবপত্র লন্ডভন্ড করা হয় বলে অভিযোগ। সিপিএম অন্ডাল-মাধাইগঞ্জ রাস্তার খান্দরা শিবতলা মোড়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সিপিএম অন্ডাল থানায় লিখিত অভিযোগ করে। পরে, বল্লভপুর ফাঁড়ি ঘেরাও করেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। সিপিএম নেতা হেমন্ত প্রভাকরের এ-ও অভিযোগ, রানিগঞ্জের এগারা পঞ্চায়েতের এক প্রার্থীকে জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকরিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপিও। দলের আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি শ্রীদীপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, কেন্দ্রার ১৭ নম্বর সংসদে তাঁদের প্রার্থী সঞ্জু সিংহের ছেলেকে মারধর ও বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অন্ডালের খান্দরা পঞ্চায়েতেও এক বিজেপি প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুর, রানিগঞ্জের রতিবাটি পঞ্চায়েতের এক প্রার্থীর প্রস্তাবককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি, কাঁকসায় পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির প্রার্থী বৃষ্টি খানের অভিযোগ, মনোনয়ন প্রত্যাহার না করা হলে তাঁর নাবালক ছেলের ক্ষতি হতে পারে, এই মর্মে তাঁকে হুমকি দিয়েছে তৃণমূল। তবে তাঁর বক্তব্য, “কোনও হুমকিতেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করব না।”
যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে বিরোধীরা জনসাধারণের সহানুভুতি আদায়ের কৌশল নিচ্ছে।” প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy