বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুরের ঘটনার পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ও হস্টেল থেকে বহিরাগতদের বার করতে উদ্যোগী হয়েছিল। গত মাসের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হস্টেলের সুপারেরা কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করেন, হস্টেলে আর কোনও প্রাক্তন বা বহিরাগত ছাত্রছাত্রী নেই। তবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাজি ও চিত্তরঞ্জন হস্টেলে ৩০-৩৫ জন করে বহিরাগত ও প্রাক্তন ছাত্ররা রয়েছেন বলে সপ্তাহ খানেক আগে পুলিশ, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন পড়ুয়াদেরই একাংশ। তাঁদের আরও অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীরাও হস্টেলের ঘর দখল করে রয়েছেন। ফলে প্রকৃত প্রাপকেরা হোস্টেল পাচ্ছেন না। জেলা পুলিশের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিযোগের চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি দেখার কথা বলা হয়েছে।
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলির দাবি, শুধু ওই দু’টি হস্টেল নয়, রবীন্দ্র হস্টেল ও তারাবাগের ভিতরে মহিলাদের হস্টেল সরোজিনীতেও বহিরাগতরা রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, হস্টেলগুলি দেখভাল করার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট ও স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার দফতরের। নজরদারির গাফিলতিতেই বহিরাগত বা প্রাক্তনীরা হস্টেলের ঘর দখল করে থাকছেন বলে অভিযোগ। আবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও হস্টেলেই বহিরাগত নেই বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে অভিযোগে।
তাঁদের দাবি, নেতাজি হস্টেলে অন্তত ৩০ জন বহিরাগত ঘর দখল করে রয়েছেন। তিন জনের নামে সরাসরি অভিযোগ করে বলা হয়েছে, আবাসিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি, মেস কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ থেকে নিরাপত্তা রক্ষীদের মাধ্যমে হস্টেলে নানা রকম অসামাজিক কাজকর্ম করেন তাঁরা। চিত্তরঞ্জন হস্টেলেও চার প্রাক্তনী হোস্টেলে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন বলে অভিযোগ হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষী হিসাবে থেকে তাঁরা মেস কমিটি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলেও অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন, নেতাজি ও বিবেকানন্দ হস্টেলে ৯৮টি করে ঘর রয়েছে। তার মধ্যে ৯২ থেকে ৯৬টি ঘর ব্যবহার হয়। প্রত্যেকটি হস্টেলে ১৮৪ থেকে ১৯২ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ৮৬ থেকে ৯৮ জন ছাত্র থাকে সেখানে। ‘ফাঁক’ পূরণ করে দেন প্রাক্তনীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে গত ১৭ অগস্ট একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাত দিনের মধ্যে বহিরাগত, প্রাক্তনীদের হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩১ অগস্ট বৈঠক করে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, কোনও হস্টেলে বহিরাগত বা প্রাক্তনী নেই। প্রতিটি ঘরের আবাসিকদের নাম ঘরের বাইরে টাঙিয়ে দেওয়া, অতিথিদের জন্য রেজিস্টার রাখার কথাও জানানো হয়। তার পরেও অভিযোগ উঠছেই।
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরী বলেন, “টিএমসিপি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের একাংশের মদতেই হস্টেলের ঘর দখল হচ্ছে। মিথ্যা রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। আমরা বহিরাগত মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানাচ্ছি।’’ এবিভিপির বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা রঞ্জন সেনের দাবি, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে দায়মুক্ত হয়েছেন। কিন্তু টিএমসিপির বহিরাগতদের দাপট হস্টেলে কমেনি। আবাসিকরা ভয়ে রয়েছেন।” টিএমসিপি অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (রামিজ) বলেন, “হস্টেলে বহিরাগতরা যে থাকেন না, তা বিশ্ববিদ্যালয় মেনে নিয়েছে। এই সব অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই।” হস্টেল সুপারদের একাংশ জানিয়েছেন, আবাসিকদের অতিথি হিসেবে অনেক প্রাক্তনী কয়েক দিনের জন্য হস্টেলে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট ও স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার বিভাগের আধিকারিক অরিজিৎ আঢ্যর দাবি, “আমার মন্তব্য করার কোনও অধিকার নেই। যা বলার রেজিস্ট্রার বা সহ-উপাচার্য বলবেন।” সহ-উপাচার্য আশিস পাণিগ্রাহী বলেন, “আমি বাইরে আছি। যা বলার অরিজিৎ বা রেজিস্ট্রার বলবেন।”
আর রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরীর দাবি, ‘‘আমাদের কাছে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। আমরা জানি, হস্টেলগুলিতে কোনও বহিরাগত নেই। অভিযোগ এলে দেখা হবে।’’ এই ধরনের অভিযোগ আটকাতে এ বছর থেকেই প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের আলাদা হস্টেলে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে ইসিতে বলে দাবি করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy