‘চাচি-মা’র পাশে Qঅভিরূপ। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের ‘চাচি-মা’ কোহিনুর বেগম শেখকে শহরে এনে, ‘স্বাস্থ্যসাথী’র কার্ড করিয়ে দিয়ে অস্ত্রোপচার করালেন বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার অভিরূপ যশ। দিলেন স্বাস্থ্য-পরীক্ষার খরচও।
বর্তমানে বর্ধমান শহরের বোরহাটের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের অভিরূপের চেষ্টায় শুক্রবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ভাতারের শিকারপুরের কোহিনুর। শনিবার গ্রামে গিয়ে কোহিনুরের খোঁজও নেন অভিরূপ।
বছর পঞ্চান্নর কোহিনুর কয়েক দিন ধরে পেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। দিনমজুরি করে সংসার চালান তাঁর ছেলে নাজিমুল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘বর্ধমান সদরে মাকে ভাল ডাক্তার দেখানোর ইচ্ছা থাকলেও, ভরসা পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ মনে পড়ে, গ্রামেরই ছেলে অভিরূপদা এখন বর্ধমান শহরে থাকেন। ভাল ডাক্তারের খোঁজ দিতে পারবেন ভেবে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি আমাদের বর্ধমানে আসতে বলেন।’’
নাজিমুল জানান, ১০ জুন তাঁরা বর্ধমানে যাওয়ার পরে, এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান অভিরূপ। ডাক্তার কোহিনুরের স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করাতে বলেন। কিন্তু পরীক্ষা করানোর খরচ পাঁচ হাজার টাকা শুনে, নাজিমুলেরা চিন্তায় পড়েন। তখন অভিরূপ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করেন। কোহিনুরের গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ায়, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার অস্ত্রোপচার করাতে বলেন। অভিরূপ তাঁকে বর্ধমানের বামচাঁদাইপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে যান।
অভিরূপের কথায়, ‘‘ওই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জানতে পারি, চাচি-মার স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নেই। দ্রুত অস্ত্রোপচার করানোও দরকার ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করে চাচি-মাকে ভর্তি করাই। তার পরে, জেলা পরিষদের স্বাস্থ্যসাথী সেলে চাচি-মার কার্ড করাতে ছুটি।’’
সোমবার সে কার্ড পাওয়ার পরে, কোহিনুরের অস্ত্রোপচার হয়। বাড়ি ফেরার সময় তিনি বলেন, ‘‘ছেলের মতো পাশে থেকে আমাকে সুস্থ করিয়ে তুলল অভিরূপ। ও আমার কাছে সাক্ষাৎ আল্লাহ্।’’ নাজিমুল বলেন, ‘‘ধর্ম আলাদা হতে পারে। কিন্তু অভিরূপদা নিকট আত্মীয়ের থেকেও বেশি করে বিপদে পাশে থেকেছেন।’’
বাবা-মা, ভাই, স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে সংসার ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন্স নিয়ে বি টেক পাশ অভিরূপের।
অভিরূপের বাবা-মা সুনীলকুমার এবং মালা যশের বক্তব্য, ‘‘মানবতার থেকে বড় ধর্ম কিছু নেই। এখনকার অস্থির সময়ে সেটা আরও বেশি করে মাথায় রাখা দরকার। ছেলে যা করেছে, কিছু বেশি নয়।’’
অভিরূপ বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি একই গ্রামে। ছোট থেকে চাচি-মা বলে ডাকি। উনি সুস্থ হয়েছেন, তাতেইখুশি আমি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy