বিয়ের কার্ড হাতে প্রীতিদেবী। নিজস্ব চিত্র।
তিল তিল করে মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছেন ব্যাঙ্কে। কিন্তু নোট বাতিলের ঘোষণার কুড়ি দিন পরেও সেই ‘হকের ধন’ তুলতে গিয়ে এমন পাকে পড়তে হবে বুঝতে পারেননি প্রীতি পাত্র।
আর দিন দশেক পরেই মেয়ের বিয়ে বর্ধমান শহরের কালনাগেটের কাছে খালাসিপাড়ার বাসিন্দা প্রীতিদেবীর। সোমবার বিয়ের জোগাড়যন্ত্র করতেই এলাকারই সারদাপল্লির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যান তিনি। ওই ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর। কিন্তু টাকা পাননি। প্রীতিদেবী জানান, মেয়ের বিয়ের কার্ড নিয়ে সকাল সকাল লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। অ্যাকাউন্টে থাকা ৫৯ হাজার টাকা তুলতে চেয়ে ফর্ম পূরণ করে জমাও দেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর হাতে একগুচ্ছ ফর্ম ধরিয়ে জানিয়ে দেয়, ক্যাটারিংয়ের বিল, কাপড়ের দোকান, গহনার দোকানের বিল দিয়ে ওই ফর্মগুলি পূরণ করে নিয়ে এলে তবেই টাকা দেওয়া হবে। কিংবা জেলাশাসকের কাছ থেকে লিখিত নির্দেশ নিয়ে আসতে হবে। আতান্তরে পড়ে যান মাঝবয়েসী মহিলা।
ব্যাঙ্কের কর্মীদের প্রীতিদেবী জানান, বর্ধমান রেল স্টেশনে জিনিস ফেরি করে মা-মেয়ের সংসার চালান তিনি। সেখান থেকেই মেয়ের জন্য অনেক দিন ধরে ওই টাকা জমিয়েছেন। টাকা না থাকায় কিছুই জোগাড় হয়নি, ফলে বিল পাওয়া সম্ভব নয় সে কথাও বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘টাকা থাকলে তো কিনেই ফেলতাম। আমি জিনিস না কিনলে কেউ কী বিল দেবে? আমার ক্যাটারিং করার ক্ষমতা কোথায়? পাড়ার লোকজনের সাহায্যে নিজেরাই বরযাত্রীদের আপ্যায়ণের ব্যবস্থা করছি।’’ কিন্তু ব্যাঙ্কের কর্মীরা তাঁকে সাফ বলে দেন, ‘নিয়মের ফাঁসে আমাদের কিছু করার নেই।’
এরপরে দু’সপ্তাহে চব্বিশ হাজার টাকা করে তোলার আর্জি জানান তিনি। কিন্তু সেখানেও বাধা আসে। ওই মহিলার দাবি, তাঁকে লা হয়, বড়জোড় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া যেতে পারে। প্রীতিদেবীর কথায়, ‘‘আমার একমাত্র মেয়ে। ওঁর বিয়ের জন্য সংসার চালিয়ে, আধ পেটা খেয়ে টাকা জমিয়েছি। বিয়ের সময় একটা আংটি দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেটা আর দিতে পারব না।” শুধু আংটি নয়, কানের দুলও মেয়েকে দিতে পারছেন না প্রীতিদেবী। তাঁর কথায়, “শখ করে মেয়েটা কানের দুল চেয়েছিল। সেটাও তো দিতে পারব না।” তাঁর দাবি, ‘‘এ রকম পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ফোন করেছিলাম হবু জামাইকে। বিয়ে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা আত্মীয়স্বজন থেকে পাড়া-পড়শি সবাইকে নিমন্ত্রণ করে ফেলেছেন। ফলে বিয়ে পিছোনো যাবে না।
প্রীতিদেবী মতো বিপাকে পড়েছেন আরও অনেকেই। টানা ২০ দিন কাটার পরেও বহু ব্যাঙ্কের শাখায় টাকার নিয়মিত জোগান নেই। খোসবাগানের অনন্তদুলাল বসু কার্জন গেটের কাছে প্রথমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, পরে বেসরকারি ব্যাঙ্কে গিয়েও ২৪ হাজার টাকা পাননি। সাকুল্যে পেয়েছেন ১৬ হাজার টাকা। তাঁর কথায়, “সেই শুক্রবার থেকে টাকার জন্য ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু নিজের টাকাই তুলতে পারছি না।’’ একই পরিস্থিতির শিকার বড়বাজারের শিকারা বোস, বাবুরবাগের ইসমাইল শেখরা। প্রত্যেকেরই প্রশ্ন, এই পরিস্থিতি কাটবে কবে? তার উপর মাস শেষ হলেই তো পরিচারিকার টাকা, সংবাদপত্রের হকার, দুধ বিক্রেতাকে টাকা দিতে হবে, সেই টাকা আসবে কোথা থেকে?
উত্তর নেই ব্যাঙ্ক কর্মী, ম্যানেজারের কাছেও। প্রত্যেকেরই এক রা, “যেমন আসবে, তেমন ভাবেই ছাড়ব। আমাদের একটাই লক্ষ্য, লাইনে দাঁড়ানো কোনও গ্রাহক যেন খালি হাতে ফিরে না যান।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy