গভীর রাতে ফোনে খারাপ খবরটা দিয়েছিলেন মেয়ের সহপাঠীরাই। সকাল সকাল তিন আত্মীয়কে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন দুর্গাপুরে। কিন্তু দেখা পাননি কলেজ কর্তৃপক্ষের কারও। বিক্ষোভ দেখাতে থাকা পড়ুয়াদের কাছে গোটা ঘটনা শোনার পরে নলহাটির বাসিন্দা দিলীপকুমার পালের আক্ষেপ, কলেজ কর্তৃপক্ষ একটু সক্রিয় হলে হয়তো বাঁচতে পারত তাঁর মেয়ে।
বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি প্যারামেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে জানালা দিয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী দেবপ্রিয়া পালের (২০) ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান সহপাঠীরা। তাঁদের অভিযোগ, ওয়ার্ডেন অসুস্থতার কারণে হস্টেলে না থাকায় তাঁরা কলেজের নানা আধিকারিককে বারবার ফোন করেন। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। তাই ঘরের দরজা ও হস্টেলের গেটের তালা ভেঙে দেবপ্রিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরাই। কিন্তু সেখানে ডাক্তারেরা জানান, ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা রাতে কলেজে বিক্ষোভে দেখান। কলেজে ভাঙচুরও করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নলহাটির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপাড়ার বাসিন্দা দেবপ্রিয়া আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু কেন এমন ঘটল, সে নিয়ে ধন্দে তাঁর বাবা দিলীপবাবু। দেবপ্রিয়া তাঁদের একমাত্র সন্তান। এ দিন তিনি বলেন, “মঙ্গলবার বাড়ি থেকে হস্টেলে ফিরেছিল ও। কী যে হল, কিছু বুঝতে পারছি না। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেছিল ওর মাকে। তখন স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়।” তাঁর অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষের কেউ খবর দেননি। এ দিন সকালে কলেজে এসেও কর্তৃপক্ষের কারও দেখা পাননি বলে জানান দিলীপবাবু। তিনি বলেন, “মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। কলেজের তরফে আমাদের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করা হয়নি।”
কলেজ থেকে দিলীপবাবুরা যান নিউটাউনশিপ থানার বিধাননগর ফাঁড়িতে। সেখানে তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগের কথা জানান। এর পরে তাঁরা যান বিধাননগরের বেসরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে দেহ ময়না-তদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। দিলীপবাবু জানান, আগে প্লাস্টিকের সামগ্রীর দোকান ছিল তাঁর। এখন বয়সের কারণে তা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী দিপ্তীদেবী স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী। মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তিনি বাক্রুদ্ধ। নলহাটিতে বাপের বাড়িতে রয়েছেন তিনি।
দিলীপবাবুর সঙ্গে এসেছিলেন দেবপ্রিয়ার মেসোমশাই কমলকুমার বসু। তিনি জানান, ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ নয়। তিনি বলেন, “আর্থিক কারণে কোনও দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। কিন্তু মানসিক কোনও চাপ ছিল কি না, থাকলে তার কী, তা বলা মুসকিল।” তাঁরও আক্ষেপ, প্রায় সারা দিন তাঁরা দুর্গাপুরে রইলেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
সন্ধ্যায় দেহ নিয়ে নলহাটি রওনা হন দিলীপবাবুরা। সঙ্গে ছিলেন দেবপ্রিয়ার দুই মামা শান্তনু পাল ও সৌমেন পাল। শান্তনুবাবু বলেন, “এখন আর কিছু বলার মতো অবস্থা নেই আমাদের।” মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কলেজের ডিরেক্টর কৃষ্ণকান্ত ভট্টাচার্যের যোগাযোগ করা যায়নি। তবে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গড়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy