লাইনে আটকে গেছে চাকা। — নিজস্ব চিত্র।
লেভেল ক্রসিং তো নয়, যেন মরণ ফাঁদ! পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ইলামপুরে ট্রেন আসার ঠিক আগেই একটি লেভেল ক্রসিংয়ে লাইনের ফাঁকে আটকে যায় টোটোর চাকা। টোটোতে তখন সওয়ার তিন অন্তঃসত্ত্বা। চালক অনেক চেষ্টা করেও টোটোকে লেভেল ক্রসিং পার করাতে পারছিলেন না। ফলে ট্রেন আসার খবর পেয়েও রেলগেটও নামাতে পারছিলেন না গেটম্যান। ওই সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মেমারি পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী।
পুরসভা এলাকাতেই পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখার মেমারি স্টেশনটি। মেমারি শহরের মধ্যেই ইলামপুর, মেমারি বাজার ও জিটি রোডের উপরের রয়েছে রেলের লেভেল ক্রসিং। পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন জানান, এলাকায় থাকা তিনটি লেভেল ক্রসিংই মরণফাঁদের চেহারা নিয়েছে। এর ফলে প্রায় প্রতিদিনই শহরবাসীকে বিপদে মুখে পড়তে হচ্ছে। সোমবারও বিপদের মুখে পড়ে যাত্রীবোঝাই একটি টোটো। কী রকম বিপদে পড়েছিল টোটোটি? স্বপন বলেন, “সরকারি কাজে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ইলামপুর লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে পৌঁছে দেখি ট্রেন আসার খবর হয়ে যাওয়ায় লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান গেট নামাতে শুরু করেছেন। ওই সময় অনেক গাড়ি লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে গেলও তিন অন্তঃসত্ত্বা যাত্রীকে নিয়ে একটি টোটো কিছুতেই লেভেল ক্রসিং পার হতে পারছিল না। এ দিকে টোটো সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গেটম্যানও চিৎকার করছিলেন নইলে তিনিও গেট বন্ধ করতে পারছিলেন না। কাছে গেলে দেখা যায়, লেভেল ক্রসিংয়ে রেল লাইনের ফাঁকে থাকা বড় গর্তে ওই টোটোর একটি চাকা আটকে গিয়েছে। এর পরেই পথচলতি এক ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে দু’জনে মিলে পিছন দিক থেকে যাত্রীবোঝাই টোটোটিকে ঠেলতে শুরু করি। তাতেই কাজ হয়। টোটোটির চাকা গর্ত থেকে উঠে যেতেই চালক সেটিকে দ্রত লেভেল ক্রসিং পার করিয়ে নেন।”
এই খবর ছড়িয়ে পড়তে বিকালে মেমারি শহরবাসী পুরপ্রধানের প্রশংসায় মুখর হন। যদিও স্বপন বলেন, “আমাদের দলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় আমাদের বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন। নেত্রীর সেই কথাকে মান্যতা দিয়েই এ দিন বিপদে পড়া ওই টোটো যাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে সব মানুষ যদি বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাড়াঁন তা হলে আমাদের সকলেরই মঙ্গল হবে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, মেমারি পৌর এলাকায় মরণফাঁদ হয়ে থাকা তিনটি লেভেল ক্রসিং দ্রত সংস্কার করার জন্য তিনি মঙ্গলবারই রেলকে চিঠি পাঠাবেন।
টোটোচালক সাগর কর্মকার বলেন, “মেমারির পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী পাশে দাঁড়ানোয় বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে গিয়েছি।” সাগর জানান, তিনজন অন্তঃসত্ত্বা সোমবার সকালে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে তাঁর টোটো ভাড়া করেন। তাঁদের নিয়ে তিনি মেমারির নুদিপুরে যাচ্ছিলেন।পথে ইলামপুর রেলগেটের লেভেল ক্রসিংয়ে লাইনের ফাঁকের গর্তে তাঁর টোটো ফেঁসে যায়। কিছুতেই টোটোটি আর সমান্তরাল জায়গায় তুলতে পারছিলেন না। তারই মধ্যে ওই রেল পথে ট্রেন আসার খবর হয়ে যায়। পথচলতি মানুষরা তাঁর বিপদ দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। টোটোয় থাকা যাত্রীদের বিপদ দেখে স্বপন দ্রুত তাঁর স্কুটি দাঁড় করিয়ে ছুটে আসেন এবং অন্য এক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি টোটোটিকে ঠেলতে শুরু করেন। এর ফলে গর্ত থেকে টোটোটি সমতল জায়গায় ওঠানো সম্ভব হয় এবং ট্রেন আসার আগেই টোটো নিয়ে নিরাপদে লেভেল ক্রসিং পার হতে পারেন।
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাটোয়ায় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মেমারির পুরপ্রধান এ দিন যে কাজ করেছেন তার প্রশংসা না করে পারছি না। দলের সর্বস্তরের নেতা ও কর্মীরা এই ভাবেই অসহায় ও বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, আমি এই প্রত্যাশাই রাখি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy