Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

চুরির গয়না বন্ধক দিয়ে খরচ চলত ‘চেন খুনি’র

পুলিশ ধৃতের পূর্বস্থলীর চরগোয়ালপাড়ার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সমুদ্রগড় এবং তার আশপাশের এলাকার পাঁচটি দোকানে সোনা বন্ধক দেওয়ার কাগজ পেয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, বন্ধক দেওয়া সোনা ছাড়াতে সে আর ওই দোকানে পা দিত না।

ধৃত কামরুজ্জামান। নিজস্ব চিত্র

ধৃত কামরুজ্জামান। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০১:০০
Share: Save:

খুনের পরে হাতের কাছে গয়নাগাঁটি যা পেত তা নিয়েই পালাত ‘চেন কিলার’ কামরুজ্জামান সরকার। কিন্তু সে সব গয়না কখনই বিক্রি করেনি সে, তদন্তে এমনই জেনেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, চোরাই গয়না বিক্রি করতে গেলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ধরা পড়ারও সম্ভবনা থাকে। তাই প্রয়োজন মতো সেগুলি বন্ধক দিয়েই সংসার চালাত ধৃত।

পুলিশ ধৃতের পূর্বস্থলীর চরগোয়ালপাড়ার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সমুদ্রগড় এবং তার আশপাশের এলাকার পাঁচটি দোকানে সোনা বন্ধক দেওয়ার কাগজ পেয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, বন্ধক দেওয়া সোনা ছাড়াতে সে আর ওই দোকানে পা দিত না। জেলার এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘চুরির প্রমাণ লোপাট করার জন্য এক বার গয়না বন্ধক দিয়ে দিলে আর ফেরত নেওয়ার চেষ্ট করত না ও। টার্গেটও ছিল মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবার। সে কারণে বারবার খুন করেও কামরুজ্জামানের রোজগার ছিল অল্প।’’

২০১৮ অক্টোবর থেকে বাড়িতে একা থাকা সাত মহিলাকে খুন ও ১১ জন মহিলাকে হামলায় অভিযুক্ত কামরুজ্জামান কালনা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, যখন খেতে দেওয়া হচ্ছে খেয়ে নিচ্ছে, ঘুমোচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ করলে গড়গড় করে উত্তর দিচ্ছে ধৃত। তার নির্বিকার হাবভাব দেখে চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, সাধারণত ‘অপরাধী’দের মধ্যে যে ভয়, হতাশা, জেদ বা জেরায় কিছু না বলতে চাওয়ার প্রবণতা থাকে, এর সে সব কিছুই নেই। পুলিশের দাবি, জেরার জবাবে দুষ্কৃতী লোহার রড, চেন দিয়ে কী ভাবে খুনের ঘটনাগুলি ঘটিয়েছে তা বিস্তারিত জানিয়েছে। এমনকি, কালনার একটি ঘটনায় এক মহিলার গলায় চেন পেঁচানোর পরেও দরজার বাইরে মেঝেয় একটি শিশুকে দেখতে পেয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলেও ধৃত দাবি করেছে, জানিয়েছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মুর্শিদাবাদে প্রথম বিয়ে হয় কামরুজ্জমানের। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে চরগোয়ালপাড়া এলাকার এক তরুণীকে। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতের সম্পর্কে জানার জন্য দ্বিতীয় স্ত্রীর বয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চরগোয়ালপাড়ায় স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকত কামরুজ্জামান। সম্প্রতি বাড়ির সামনে শৌচাগার তৈরি করে সে। বাড়ির পিছনে একটি অংশে ঢালাই দেয়। পুলিশের অনুমান, চুরির টাকাতেই এই নির্মাণ হয়েছে। কালনার সিঙেরকোণে শেষ হামলার ঘটনাতেও বাড়ির আলমারিতে থাকা হাজার খানেক টাকা ও ভরি খানের সোনায় গয়না উধাও বলে দাবি পরিবারের।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত ঘোষ বলেন, ‘‘সামগ্রিক ভাবে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। বেশ কিছু তথ্যও মিলেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chain Killer Ornaments Mortgage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE