২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি শেষ হল সুপ্রিম কোর্টে। বুধবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের আইনজীবীরা সওয়াল করেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানি হবে। ওই দিন সিবিআই এবং মূল মামলাকারীরা সওয়াল করবেন। গত ৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মামলার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে হলফনামা জমা দিতে বলেছিল আদালত।
বুধবার আদালতে নবম-দশম এবং গ্রুপ ডি চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী মুকুল রোহতগী জানান, আসল উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট পাওয়া যায়নি এখনও। তাঁর কথায়, ‘‘আসল ওএমআর শিট এখনও পাওয়া যায়নি। যে ওএমআর শিটগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল, তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু তার রিপোর্ট আসার আগেই রায় ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই রিপোর্ট আসেনি।’’ যোগ্যদের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল পাল্টা বলেন, ‘‘আসল ওএমআর শিট যদি না-ই থাকে, তবে কত ওএমআর শিটে কারচুপি করা হয়েছে, তা কী ভাবে ধরা হল?’’ প্রধান বিচারপতি খন্না জানান, আইটি আইন অনুযায়ী সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ওএমআর নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়।
চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী মুকুল আরও বলেন, ‘‘হাই কোর্টে চাকরি বাতিলের আবেদন করেননি কেউ। মামলা করা হয়েছিল চাকরি পাওয়ার জন্য। ওয়েটিং প্যানেল নিয়ে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু আমার মক্কেলদের কেউ ওয়েটিং প্যানেলে ছিলেন না। ওই প্যানেলের মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে।’’
গ্রুপ সি চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী দুষ্যন্ত দবের সওয়াল, ‘‘দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে সঠিক ভাবে কোনও অনুসন্ধান হয়নি। কী ভাবে দুর্নীতি, কত জন তার সঙ্গে যুক্ত, তার অনুসন্ধান হয়নি। সঠিক তদন্ত হলে যোগ্য এবং অযোগ্য নিয়ে এত বিতর্ক হত না। সিবিআই হাই কোর্টের বিচারপতির নির্দেশে সাধারণ ভাবে তদন্ত করেছে। ‘ক্যাজ়ুয়াল’ তদন্ত হয়েছে। ওই বিচারপতি রাজ্যের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তা নিয়ে আমরা আপত্তি করছি না। কিন্তু তদন্তে ত্রুটি রয়েছে।’’
আইনজীবী দবে বলেন, ‘‘অনুসন্ধান ছাড়া আমাদের চাকরি বাতিল হয়ে গেল! আমাদের পরিবারের কী হবে? চার বছর ধরে আমরা চাকরি করছি। সিবিআই কী বলেছে, হাই কোর্ট তা বুঝতে পারেনি।’’ ওএমআর শিট আইন মেনে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি বলেও দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।
যোগ্য শিক্ষকদের তরফে আইনজীবী মানেকা গুরুস্বামী আদালতে জানান, মোট তিন লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে নবম-দশমে ১৮৩ জন, একাদশ-দ্বাদশে ৩৯ জন অযোগ্য। প্রতি ক্যাটেগরিতে অযোগ্যের হার অন্তত ১০ শতাংশ।
অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা বলেন, ‘‘আট ধরনের ধাপ পেরিয়ে আমার মক্কেলরা চাকরি পেয়েছেন। হাই কোর্টের রায়ে কি তাঁদের বিরুদ্ধে ওএমআর শিট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে? যদি না থাকে, কিসের ভিত্তিতে চাকরি বাতিল করা হচ্ছে?’’
প্রধান বিচারপতি জানান, হাই কোর্ট বলেছে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে। ফলে কারা যোগ্য, তা বাছাই করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কত জনের উত্তরপত্রে কারচুপি করা হয়েছে, তা-ও বোঝা সম্ভব নয়।
মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতার আইনজীবীও বুধবার শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘১৫ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি। আমার মক্কেলের চাকরি ববিতা সরকারকে দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁর চাকরিও বাতিল হয়। তৃতীয় এক জনকে চাকরি এবং টাকা দিতে বলা হয়েছে।’’
গত শুনানিতে শীর্ষ আদালতের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য, এসএসসি। সে দিন শীর্ষ আদালত মূলত যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের বাছাই করার উপরে জোর দিয়েছিল। যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা না-গেলে পুরো প্যানেল বাতিল করতে হবে বলে জানিয়ে দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
এসএসসি ‘দুর্নীতি’ মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট রায় ঘোষণা করেছিল গত ২২ এপ্রিল। হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেয়। ফলে চাকরি যায় ২৫,৭৫৩ জনের। যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয় ওই চাকরিপ্রাপকদের। হাই কোর্টের সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পৃথক ভাবে মামলা করেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy