বর্ধমান বাসস্ট্যান্ডের জমি অধিগ্রহণ ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
আদালতের নির্দেশ অমান্য করার জন্য কোপের মুখে পড়ল বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বেতন বন্ধ হল বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারের। পাশাপাশি উন্নয়ন সংস্থার বোর্ডের সদস্যদেরও আদালতের পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত বেতন বা ভাতা দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মহম্মদ সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, উল্লাস বাসস্ট্যান্ডের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু, কয়েক জনের জমি নিয়ম মেনে অধিগ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। ওই জমিমালিকদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকাও পাননি তাঁরা। তার পর ওই বাসস্ট্যান্ডের মালিকানা দাবি করে বর্ধমান আদালতে মামলা করেন ওই জমিমালিকেরা। আদালত জমির মালিকদের পক্ষেই ডিক্রি দেয়। কিন্তু তার পরও জমির দখল ফিরে না পেয়ে নিম্ন আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন তাঁরা। হাই কোর্টের একক বেঞ্চ জমি মালিকদের কাছ থেকে তৎকালীন বাজারদরে জমি কিনে নেওয়ার জন্য বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থাকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় উন্নয়ন সংস্থা। তাতে পক্ষ (পার্টি) করা হয় বাসস্ট্যান্ড তৈরির দায়িত্বে থাকা প্রমোটার সংস্থাকে। ডিভিশন বেঞ্চও মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনে নেওয়ার নির্দেশই বহাল রাখে। তা ছাড়া, জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার জন্য উন্নয়ন সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু নানা অছিলায় বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা সেই নির্দেশ মানেনি বলে অভিযোগ।
বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার এই ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাই কোর্টের দুই বিচারপতি। প্রোমোটার সংস্থা এবং বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার অফিসারদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তাঁরা। মামলাকারীদের আইনজীবী উত্তীয় রায় বলেন, ‘‘বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থাকে কবে এবং কী পদ্ধতিতে প্রোমোটার সংস্থাকে জমি হস্তান্তর করা হয়েছিল, তা জানতে চেয়েছেন বিচারপতিরা। জমি হস্তান্তর করার সময় কারা উন্নয়ন সংস্থায় ছিলেন তা-ও জানতে চেয়েছে আদালত। এ ছাড়াও যে সময়ে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা কাজের বরাত দিয়েছিল, সেই সময়ে প্রোমোটার সংস্থার শেয়ার হোল্ডার, বোর্ড সদস্যদের নাম এবং বার্ষিক লভ্যাংশ সম্পর্কিত তথ্য আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রোমোটার সংস্থার বোর্ড সদস্য এবং শেয়ার হোল্ডারদের সঙ্গে কোনও ভাবে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার সদস্যদের সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা-ও জানানোর নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।’’
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে উল্লাস এলাকায় বাসস্ট্যান্ড তৈরির জন্য জমি নেয় বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু, কৃষ্ণপ্রসাদ ঘোষ-সহ কয়েকজন জমিমালিক তাঁদের জমি নেওয়ার পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। বাজারদর অনুযায়ী জমির মূল্য বাবদ দু’কোটি ৭২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা করা এবং দ্রুত জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা আদালতে জানায় জমি রেজিস্ট্রি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই তা শেষ হয়ে হবে। বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার এই বক্তব্য শোনার পর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা ভেঙে তা জমির মালিকদের দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু, বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা নানা অছিলায় জমি কেনা এড়িয়ে চলার প্রচেষ্টায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুই বিচারপতি।
আদালতের এই নির্দেশের পর বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার এক পদাধিকারী বলেন, ‘‘এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ভাবনা-চিন্তা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy