কাটোয়া রোডে পুরনো রেল সেতু। —নিজস্ব চিত্র
কাল, শনিবার থেকে বর্ধমান-কাটোয়া রোডের রেলসেতুতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চলেছে রেল ও জেলা প্রশাসন। সেতুর দু’দিকে আড়াই ফুট উচ্চতার ‘হাইট বার’ দেওয়া হবে। ফলে, বাস, লরি, ডাম্পারের মতো ভারী গাড়ি যাতায়াত পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সেতুর পাশে নতুন ঝুলন্ত সেতুর কাজও বাকি। সেটি খোলার ব্যাপারেও নিশ্চিত নয় জেলা প্রশাসন। সব মিলিয়ে পুজোর মুখে যাতায়াত সঙ্কটে পড়তে পারে বলে মানছেন কর্তারা।
বৃহস্পতিবার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “ওই সেতুর অবস্থা বিপজ্জনক। তাই ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হচ্ছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার গভীর রাতে ওই সেতুর নীচের অংশের বড় চাঁই ভেঙে পড়ায় বর্ধমান স্টেশনে রেল লাইনের বৈদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। তার পরেই রেল কর্তারা জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে ওই সেতু পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করার আর্জি জানান। জেলাশাসক তাঁদের জানান, পুলিশ, বাস মালিক-সহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে সে বৈঠকের আগেই জেলা প্রশাসন বা পূর্ত দফতরকে কিছু না জানিয়ে এ দিন ভোরে সেতুর দু’প্রান্তে রেলের তরফে দু’টি ‘হাইট বার’ লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে জেলা প্রশাসনের অভিযোগ। আটকে যায় কাটোয়া, কালনা, বহরমপুর-সহ নদিয়া ও বীরভূমের বাসগুলি। স্কুল বাসও পার হতে পারছিল না। সেতুর দু’দিকে সার দিয়ে গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ায় সকাল থেকে যানজট হয়। হয়রান হন যাত্রীরা। কালনামুখী অনেক বাস পুরনো কালনা রোড দিয়ে যাতায়াত করতে শুরু করে। ফলে, বাদামতলা, কালনা গেট এলাকাতেও তীব্র যানজট হয়।
জটে আটকে ছিলেন মঙ্গলকোটের ধারসোনা গ্রামের জাহানারা খাতুন, বিবেক পালেরা। তাঁদের দাবি, ‘‘হঠাৎ করে সেতুতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় চরম হয়রানি হয়েছে।’’ নিত্যযাত্রী রুমা সূত্রধর, মধুসূদন চন্দ্ররা বলেন, “বাস পেতে সমস্যা হয়েছে। আগে থেকে প্রচার করে বন্ধ করলে এত মানুষের অসুবিধা হত না।’’ বিষয়টি প্রশাসনকেও জানানো হয়নি, দাবি ক্ষুব্ধ জেলাশাসকের। পরে রেলের আধিকারিকদের ফোন করে ওই ‘হাইট বার’ খুলে দেওয়ার জন্য বলেন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হাইট বার খুলে দেওয়ার পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। জেলাশাসকও জরুরি ভিত্তিতে বাস মালিক, পূর্ত দফতর, রেল, পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে এ দিন সন্ধ্যায় একটি বৈঠক ডাকেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩০ সাল নাগাদ বর্ধমান থেকে কাটোয়া যাওয়ার জন্য সেতুটি তৈরি হয়। সেতুর নীচ দিয়ে আসানসোল, বোলপুর ও কাটোয়াগামী ট্রেন চলে। নয়ের দশকের গোড়ায় রাজ্য পূর্ত দফতর ও রেল কর্তৃপক্ষ সেতুটিকে ‘দুর্বল’ ঘোষণা করে। ১৯৯৬ সালে রেল বাজেটে নতুন সেতু তৈরির ঘোষণা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে ওই প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার মুখে পড়ে। সেই সময় বাম সরকার বিশেষ উদ্যোগী হয়ে ঠিক করে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ধাঁচে ‘ঝুলন্ত সেতু’ তৈরি করা হবে। তৃণমূল সরকার আসার পরে রাজ্যের অংশীদারের টাকা রেলের হাতে তুলে দিতেই ২০১২ সালের গোড়ায় সেতুর কাজ শুরু হয়। তবে এখনও কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, রেলের সঙ্গে যৌথ পরিদর্শন করে ২০১৮ সাল থেকে পুরনো সেতু দিয়ে যান চলাচল নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছিল। ওই পরিদর্শনের আগে বেশ কয়েকবার সেতুর ক্ষতিও হয়েছিল।
এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়, শনিবার থেকে বাসগুলিকে বাজেপ্রতাপপুরের চারখাম্বায় দাঁড় করানো হবে। সেখানে নতুন সেতুর নীচে অস্থায়ী ভাবে যাত্রী, বাসকর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেবে প্রশাসন। ভারী গাড়িগুলি চলবে পালিতপুরের রাস্তা দিয়ে। স্কুল বাসগুলিকে খুব সতর্ক ভাবে ছাড়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় লেন, “সেতুর দু’দিকে, কাটোয়া ও কালনা রোড, নবাবহাট মোড় ও পালিতপুরের মুখে পুলিশ থাকবে। সে জন্য অতিরিক্ত ১০০ পুলিশ রাস্তায় নামানো হচ্ছে।’’
রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (বর্ধমান ডিভিশন) বিকাশ কুমার বলেন, ‘‘সেতুটির অবস্থা ভয়াবহ। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ কাজ করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, শীঘ্রই হাওড়া-দিল্লি চারটি দ্রুতগামী ট্রেন চলার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সেতুটি কাঁপার, বিপদ ঘটারও সম্ভাবনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy