দুর্গাপুরে একটি সংস্থার অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
বিধানচন্দ্র রায়কে দুর্গাপুর শহরের রূপকার বলা হয়। সেই সঙ্গেই, এই শহরকে আধুনিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাঁর অবদান যথেষ্ট, তিনি সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে দুর্গাপুরের একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রুগ্ণ ও বন্ধ হতে শুরু করে। দুর্গাপুরের অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসে। রাজ্য সরকারের নতুন শিল্পায়ন নীতির হাত ধরে এর পরে দুর্গাপুরে গড়ে উঠতে শুরু করে স্পঞ্জ আয়রন, ইস্পাত অনুসারী শিল্প। তবে তা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিকল্প ছিল না। সেই ফাঁক পূরণ করতে তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রকে ব্যবহারে উদ্যোগী হয় তৎকলানী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার। শহরে গড়ে ওঠে বহু বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ, বেসরকারি হাসপাতাল, তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠতে থাকে শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স, বড় হোটেল। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা শহরে শো-রুম খোলে। নানা নামী স্কুল শাখা খুলতে শুরু করে। অর্থনীতির পাকদণ্ডি বেয়েই মানুষের ভিড় বাড়ে এই শহরে। তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করতে নতুন নতুন বহুতল মাথা তোলা শুরু করে। সব মিলিয়ে, দুর্গাপুরে উন্নয়নের পালে হাওয়া লাগে।
বৃহস্পতিবার ফুলঝোড়ের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বুদ্ধদেবকে স্মরণ করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হয়। কলেজ সোসাইটির সভাপতি তরুণ ভট্টাচার্য জানান, ২০০১ সালের ২২ জানুয়ারি কলেজের উদ্বোধন করে রাজ্যে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন বুদ্ধদেব। তরুণ বলেন, “দুর্গাপুর শহর আধুনিক করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান মনে রাখার মতো।” ২০০১ সালে বিধাননগরেও একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্বোধন করেন তিনি। বিধাননগরে এক বেসরকারি হাসপাতালেরও উদ্বোধন করেছিলেন ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে। সেটির চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু জানান, গোড়ায় হাসপাতাল চালাতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেয়েছিলেন। দুর্গাপুরের বহু বেসরকারি কারখানাও খুলেছিল বুদ্ধদেবের হাত ধরেই।
বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি চালু করার জন্য ২০০৪ সালে বুদ্ধদেব কথা বলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী সন্তোষমোহন দেবের সঙ্গে। মন্ত্রকের তরফে একটি দল পরিদর্শন করে যায়। পরে কেন্দ্রীয় তিন সংস্থা কনসোর্টিয়াম গড়ে হাই কোর্টের মাধ্যমে কারখানার দায়িত্ব পায়। নানা কারণে কারখানা আজও চালু হয়নি। কিন্তু বুদ্ধদেব কারখানা খোলার সম্ভাবনা তখন জিইয়ে তুলেছিলেন, মনে করেন শহরের অনেকে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মাধ্যমে কাজের সুযোগ বাড়াতে ২০১০ সালের নভেম্বরে পলাশডিহায় জাতীয় সড়কের পাশে ‘ওয়েবেল আইটি পার্ক’ উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব। এখন সেখানে প্রায় ৩০-৩২টি সংস্থা কাজ করছে। পার্কের ইন-চার্জ তথা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কো-অর্ডিনেটর মণিকাঞ্চন দত্ত বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রসারে তাঁর অবদান ভোলার নয়।”
দলের কাজেও বুদ্ধবাবু একাধিক বার দুর্গাপুরে এসেছিলেন। শেষ বার এসেছিলেন ২০১১ সালে সিপিএমের অবিভক্ত বর্ধমানের জেলা সম্মেলনে। গান্ধী মোড় ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তৃতা করেন তিনি। সিটি সেন্টারে দলীয় কার্যালয় বিমল দাশগুপ্ত ভবনে ছিলেন তিনি। দলের নেতাদের সূত্রে জানা যায়, তিনি হোটেলে থাকতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। তাই এই ব্যবস্থা করে দল। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা তখনই শুরু হয়ে গিয়েছে। সিঁড়ি ভাঙা এড়াতে তাই কার্যালয়ের একতলায় তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেটাই ছিল দুর্গাপুরে তাঁর শেষ কর্মসূচি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy