নান্দুরের খুন হওয়া জনজাতি সম্প্রদায়ের তরুণীর বাড়িতে তৃণমূলের আদিবাসী সেলের নেতারা। নিজস্ব চিত্র ।
দিদিকে দেখেই পড়াশোনা করা। দিদিকে দেখেই এনসিসিতে ভর্তি হওয়া। দিদিকে দেখেই পুলিশের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া। দিদির সঙ্গে সাত সকালে মাঠে গিয়ে শরীরচর্চা করা। সুরজিৎ হাঁসদার দিনযাপনের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন তাঁর দিদি প্রিয়াঙ্কা, যাঁর গলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়েছিল তাঁরই বাড়ির কাছে পাঁচ দিন আগে। সোমবার রাখি পূর্ণিমার দিন দিদির অভাব বড্ড বেশি অনুভব করেছে সুরজিৎ।
সকালে অসুস্থ শরীর নিয়ে বর্ধমানের নান্দুর-ঝাপানতলায় বাড়িতে কার্যত নিঃসঙ্গ ছিলেন সুরজিৎ। এক চিলতে রোদে, হাতে দিদির ছবি নিয়ে বসে বলছিলেন, “দিদি নিজের হাতে রাখি তৈরি করে আমাকে পড়িয়ে দিত। গত বছর গ্রামের সকলের সঙ্গে রাখি কিনে এনেছিল।’’ এ বার বেঙ্গালুরু থেকে পাথর খচিত রাখি এনেছিলেন ভাইয়ের জন্য। ব্যাগে রেখে দিয়েছিলেন রাখিটি। ‘‘দিদির সঙ্গে সেই ব্যাগটিও শ্মশানে চলে গিয়েছে।” বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে সুরজিতের।
শুধু প্রিয়াঙ্কার পরিবার নয়, নান্দুর-ঝাপানতলার কেউ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি শোক। স্তম্ভিত সকলেই। ওই এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে রাখি পরানোর রেওয়াজ তৈরি হয়েছিল। এ বারের রাখি উৎসব ম্লান হয়ে গিয়েছে। গ্রামের যুবক পতিতপাবন পাল (মানু) বলেন, “আমরা রাখি কিনে এনে গ্রামের সবাইকে পরাই। প্রিয়াঙ্কার খুনের জন্য এ বার তা করা হচ্ছে না।” ঝাপানতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে মঙ্গলা হাঁসদা, শিবচরণ হেমব্রমরা বলছিলেন, “গত কয়েক বছর ধরে গ্রামে রাখি পরানোর চল শুরু হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কার খুনের পরে গ্রামবাসীর মন খারাপ। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। সে কারণে ঘটা করে রাখি পরানো হচ্ছে না।”
প্রিয়াঙ্কার বাড়ির সামনে কয়েক জন বালক-বালিকা খেলছিল। তারাও বলছিল, “প্রিয়াঙ্কা দিদিকে খুন করা হয়েছে। সে কারণে আমরা কেউ রাখি পরছি না।” মোহনবাগানের জার্সি গায়ে এক যুবক দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তার ধারে। তিনিও বললেন, “আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছি। আরজি করের নির্যাতিতার জন্যও বিচার চাইছি। গ্রামের দিদির জন্যও আন্দোলন করছি। সে কারণেই রাখি উৎসবে সবাই অংশ নিচ্ছেন না।” গ্রামে ঢোকার মুখে ফ্লেক্স টাঙিয়ে আততায়ীর গ্রেফতার ও বিচারের দাবি তোলা হয়েছে। সুরজিৎ বলছিলেন, “কোনও কিছুই ভাল লাগছে না। আমার শরীর খুব খারাপ করছে। কথা বলতেও ইচ্ছা করছে না। সারাদিন শুয়ে থাকছি। আজ দিদির কথা খুব মনে পড়ছে।”
গত বুধবার সন্ধ্যায় সুরজিৎকে গৃহশিক্ষকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল প্রিয়াঙ্কার। সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে শৌচালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দশ মিনিট কেটে যাওয়ার পরেও না ফেরায় প্রিয়াঙ্কাকে ফোন করেছিলেন তাঁর মা কাজল। ফোন না ধরায় খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায়, শৌচাগারের ৫০ ফুট দূরে জমিতে পড়ে রয়েছে প্রিয়াঙ্কার রক্তাক্ত দেহ। মায়ের চিৎকার শোনার পরেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান সুরজিৎ। তাঁর কথায়, “আমি প্রথমে ভেবেছিলাম শিয়ালে দিদিকে খুবলে দিয়েছে। অনেক পরে বুঝতে পারি, দিদিকে খুন করা হয়েছে।” সুরজিতের পিসি বন্দনা সোরেন বলেন, “প্রিয়াঙ্কার মৃত্যুর আগে থেকেই সুরজিৎ অসুস্থ ছিল। এখন সারাদিন শুয়ে থাকছে। আর দিদির কথা চিন্তা করছে।”
এ দিন দুপুরে তৃণমূলের রাজ্য আদিবাসী সেলের চেয়ারম্যান দেবু টুডুর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল নিহতের বাড়ি গিয়েছিল। নিহতের মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। দেবু বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই এই পরিবারের পাশে আছি। আমরা চাই, পুলিশ দ্রুত আততায়ীকে গ্রেফতার করুক। পুলিশের উপরে আমাদের ভরসা আছে।”
নিহতের মা এ দিন তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের কাছে আততায়ীকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। এএসপি (বর্ধমান সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। খুব সতর্ক ভাবে এগোচ্ছি। খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলা সম্ভব হবে বলেই আশা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy