ধৃত খোকন সেন। নিজস্ব চিত্র
এর আগেও বর্ধমান স্টেশন চত্বরের ‘দখল’ নিয়ে অশান্তি বেধেছে শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। মঙ্গলবারও তৃণমূল, বিজেপির গোলমাল, বোমাবাজি দেখেছে শহর। প্রশ্ন উঠছে, বিপুল আয়ের জন্যই কী নজর এই এলাকায়। স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দল এমনকি, পুলিশের কর্তাদের কথাতেও সায় মিলেছে তার।
রেল সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান স্টেশনের মূল প্রবেশ পথের সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুট এলাকা ‘পার্কিং’য়ের জন্যে বরাদ্দ। বাকি জায়গাতেও বেআইনি পার্কিং থাকে। সিপিএম আমলে এই চত্বরের ‘রাশ’ ছিল খোকন সেন ওরফে বিশ্বজিৎ সেনের হাতে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খোকনের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, বেআইনি পার্কিং থেকে টাকা আদায়, ঠিকাকর্মী, হকারদের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগ ছিল। ২০১০ সালেই ৪টি অভিযোগ জমা পড়ে তাঁর নামে। ২০১১ সালে পরিবর্তনের পরে ‘দাদা’ বদলালেও ছবিটা বদলায়নি। বর্তমানে আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদ ওরফে পাপ্পুর নামেও একই অভিযোগ রয়েছে। সঙ্গে জুড়েছে টোটোদের কাছ থেকে ‘তোলা’ আদায়। সিপিএম ছেড়ে সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন খোকন। সোমবার স্টেশন চত্বরে সভা করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করে বিজেপিও। দুই নেতার কেউই অবশ্য অভিযোগ মানেননি। মঙ্গলবারের ঘটনাও এই ক্ষমতা দখলেরই জের।
পুলিশ জানায়, ওই দিন সকালে পুরনো সাইকেল স্ট্যান্ড লাগোয়া একটি জায়গায় চায়ের গুমটি খুলে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করে বিজেপি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে জড়ো হয় তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকেরা। জমায়েত গড়ায় উত্তেজনা, বোমাবাজিতে। মঙ্গলবারই পুলিশ এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩৫ জনকে আটক করে। পরে তাঁদের মধ্যে ২৯ জনকে গ্রেফতার করে বুধবার আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি নেতা খোকনও। পুলিশ জানায়, ধৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি জমায়েত করে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া, আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দাপানো, মারধর, বাড়ি ভাঙচুর-সহ একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে। বোমার আঘাতে ভূতনাথ দাস নামে এক টোটো চালক জখম হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, বোমাবাজির খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খোকন সেন ও তাঁর সঙ্গীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরছিলেন। পুলিশ কর্মীদের ‘খুন করার উদ্দেশে’ দুষ্কৃতীরা ওই কান্ড ঘটাচ্ছিল বলেও তদন্তকারীদের দাবি। বুধবার অবশ্য ওই গুমটি স্টেশন চত্বরে দেখা যায়নি। টোটোর ভিড় কম থাকলেও বাজার-দোকান স্বাভাবিক ছিল।
আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, স্টেশন চত্বর এলাকায় লোকজনকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা খোকনের পুরনো অভ্যাস। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেও অভ্যাস বদলায়নি। তৃণমূল জমানায় তাঁর বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ রয়েছে। গত ১৮ জুন অস্ত্র আইনে মামলা হয় ওই নেতার বিরুদ্ধে। তাঁর অবশ্য দাবি, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মামলা করা হয়েছিল। তোলাবাজি আটকানোর জন্যেই রাজনৈতিক সভা করার পরেই চক্রান্ত করে ফাঁসানো হল আমাকে।’ এ দিন খোকনকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের ২০ অগস্ট পর্যন্ত জেল হাজত দেন বিচারক।
মঙ্গলবার রাতে পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। ঘোড়দৌড় চটি থেকে মিছিল করে কার্জন গেটে অবস্থানও করেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। রাত ৯টা থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা অবস্থান চলায় কার্জন গেট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গাড়ির লাইন পড়ে যায় পুলিশ লাইন, তেলিপুকুর, স্টেশন চত্বর পর্যন্ত। জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দী বলেন, “অনেক দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করল তৃণমূল।’’ তৃণমূল নেতা খোকন দাসের দাবি, “জামা পাল্টে ফের আতঙ্কের দিন ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল। সেটাই কঠোর হাতে পুলিশ দমন করেছে।’’
রেলের কর্তারা জানিয়েছেন, স্টেশনে ‘রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ’ নিয়ে পূর্ব রেল দফতরে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। বেআইনি পার্কিং ও দখলদার উচ্ছেদ করার জন্যে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy