কৃষ্ণদাস পাল। নিজস্ব চিত্র
পাল পরিবারের দুর্গাপুজোর দায়িত্ব এ বার তাঁর ছিল। মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জা থেকে পঙ্ক্তিভোজের আয়োজনে যেন কোনও ত্রুটি না থাকে, অসুস্থ অবস্থাতেও গ্রামের বাড়িতে সেই নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন তিনি। সোমবার রাতে মারা গেলেন রাজ্যের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোগী ‘বিস্কফার্ম’-এর কর্ণধার কৃষ্ণদাস ওরফে কে ডি পাল। মঙ্গলবার কৃষ্ণদাসবাবুর সম্পর্কিত ভাই, বর্ধমানের কামারকিতা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত পাল বলেন, “মাসে তিন-চার বার গ্রামের বাড়িতে আসতেন। সবাইকে নিয়ে হইচই করতেন। এ বছর দাদাদের প্রথম দুর্গাপুজোর পালা পড়েছিল। সব কিছু বায়না হয়ে গিয়েছে। উনি আমাদের ছেড়ে গেলেও ওঁর ইচ্ছেমতোই পুজো হবে।’’
প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময়েই গ্রাম ছেড়ে বাবার হাত ধরে কলকাতায় চলে যান কৃষ্ণদাসবাবু। তবে সাফল্য মাটির গন্ধ ভোলাতে পারেনি। কামারকিতা গ্রামের যুবক দিব্যেন্দু দাসের দাবি, “অসুস্থ অবস্থাতেও উনি গ্রামে এসেছেন। গ্রামকে খুব ভালবাসতেন। শেষ কয়েকমাস আসতে পারেননি ঠিকই কিন্তু লকডাউনের সময়েও গ্রামের মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য করেছেন।’’ এ দিন সকালে কামারকিতা-সহ আশেপাশের কিছু গ্রামে বিক্ষিপ্ত ভাবে তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠান করা হয়। আজ, বুধবার বিকেলেও স্থানীয় বাসিন্দারা কৃষ্ণদাসবাবুর স্মরণসভার আয়োজন করেছেন। ওই গ্রামের এক প্রৌঢ় প্রভুদয়াল দাসের কথায়, “গ্রামে ১১২টি পথবাতি লাগিয়ে দিয়েছেন। বিদ্যুতের বিলও উনি মেটাতেন। বাড়ি-বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ করে দিয়েছেন। উনি চলে যাওয়ার পরে গ্রামের বাসিন্দারা যাতে সমস্যায় না পড়েন , সে জন্য একটি সংস্থাও তৈরি করে দিয়েছেন। দূরদর্শী ছিলেন।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লোহার রডের খাঁচা করে গ্রামের ৯৫ শতাংশ রাস্তা কংক্রিট করে দেওয়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার, শ্মশানঘাট তৈরি, দাতব্য চিকিৎসা, কম্পিউটার শিক্ষা, সেবা প্রতিষ্ঠানের মতো একাধিক প্রকল্প গ্রামের মানুষের জন্য চালু করেছিলেন। আশেপাশের গ্রামেও প্রচুর প্রাচীন মন্দির সংস্কার করেন। গ্রামবাসী বিবেকানন্দ মল্লিকের দাবি, “গ্রামের মানুষের আবদার উনি ফেরাতেন না। কয়েকবছর আগে ঝড়ে আমাদের গ্রাম ক্ষতির মুখে পড়েছিল। উনি একশোরও বেশি বাড়ি দাঁড়িয়ে থেকে সংস্কার করে দিয়েছিলেন।’’ অমিয় চৌধুরী, প্রভাকর ঘোষদের কথায়, “কৃষ্ণদাসবাবু তাঁর সংস্থায় এলাকার প্রচুর বেকার যুবকদের কাজ দিয়েছেন। গ্রামের মানুষের বিপদে-আপদে দাঁড়িয়েছেন। এখান থেকে অসুস্থদের নিয়ে গিয়ে তাঁর হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করেছেন।’’ স্থানীয় সিপিএম নেতা গণেশ চৌধুরীও বলেন, “হাটগোবিন্দপুরে কলেজ তৈরির সময়ে উনি খুব বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন।’’
ওই বাড়ির বধূ, ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালের দাবি, “গ্রামের প্রতি ওঁর ভীষণ টান ছিল। ওঁর অবর্তমানে গ্রামের মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই শিক্ষা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy