স্কুলে সুভাষবাবু। নিজস্ব চিত্র।
কেমোথেরাপি’ চলার সময়েও স্কুলের কাজে ফাঁক পড়েনি। যন্ত্রণাক্লিষ্ট অবস্থাতেই দক্ষ হাতে সামলেছেন পড়ুয়াদের। স্কুলে তৈরি করেছেন পাখিরালয়। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, নয়াদিল্লিতে জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পেতে চলেছেন বর্ধমানের কাঞ্চননগরের দীননাথ দাস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত।
মঙ্গলবার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের স্কুলশিক্ষা দফতরের অধিকর্তা জি বিজয় ভাস্কর চিঠি দিয়ে ২০১৮ সালের জাতীয় শিক্ষক হিসেবে সুভাষবাবুকে মনোনীত করার কথা জানিয়েছেন। জানানো হয়েছে, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে শংসাপত্র, রুপোর মেডেল-সহ নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হবে তাঁর হাতে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই সুভাষবাবুকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে ভাসেন সহকর্মী, পড়ুয়া থেকে এলাকাবাসীরা। সুভাষবাবু বলেন, “সহকর্মীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলেই এই পুরস্কার পাচ্ছি। আসলে সম্মানটা সবার।’’
স্কুল সূত্রে জানা যায়, সুভাষবাবু দীর্ঘ দিন ধরে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। টানা এক বছর ‘কেমোথেরাপি’ চলে। ওই স্কুলের এক শিক্ষক বাসুদেব মণ্ডল বলেন, “প্রধান শিক্ষক টানা ১৮ মাস ছুটি নিতে পারতেন। কিন্তু তিন মাস পরেই স্কুলে যোগ দেন। ‘কেমোথেরাপি’ চলার সময়েও তিনি স্কুলের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন।’’
সুভাষবাবুর আদি বাড়ি সিউড়ির কাছে পারুলিয়া গ্রামে। তাঁর পরিবারের ১৪ জন স্কুল-শিক্ষক। বাবাও অণ্ডালের একটি স্কুলে পড়াতেন। ১৯৯৬ সালে কাঁকসার অযোধ্যা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ২০০৭ সালে কাঞ্চননগরের স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন। অন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবি, ভগ্নপ্রায় স্কুলের ভোল পাল্টে দিয়েছেন সুভাষবাবু। স্কুলের ভিতর তৈরি করেছেন ভেষজ বাগান। তেজপাতা, দারুচিনি, আমলকি, বাসক, তুলসি, কারিপাতার মতো একাধিক গাছ লাগিয়েছেন সেখানে। স্কুলের ভেতরেই শুরু করেছেন জৈব পদ্ধতিতে চাষ। মিড-ডে মিলে সেই ফসল ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, স্কুলের ভিতর ১৩০ বছরের পুরনো বটগাছের ডালে ‘পাখিরালয়’ গড়েছেন তিনি। পাখিদের জন্য ঝোলানো হয়েছে মাটির পাত্র। পেঁচাদের জন্যে রয়েছে কাঠের বাক্স। বছরভর বসন্ত বাউড়ি, হাঁড়িচাচা, চাতক-সহ নানা পাখির দেখা মেলে সেখানে।
পড়ুয়া প্রীতম চট্টোপাধ্যায়, শ্যামলী মণ্ডল, শিক্ষক দীপ্তসুন্দর মুখোপাধ্যায়দের দাবি, “পাখিরা যাতে খাবার ও জল পায়, সেই ব্যবস্থা কী ভাবে করতে হবে হেডস্যার শিখিয়ে দিয়েছেন।’’ স্কুলের প্রাক্তনী পতিতপাবন দত্ত, প্রাক্তন কাউন্সিলর খোকন দাসদের কথায়, “স্কুলের পরিবেশ পাল্টে দিয়েছেন হেডস্যার। উনি আমাদের গর্ব।’’
আর সুভাষবাবু বলেন, ‘‘আসলে প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাঁচব, এই বোধটা জাগাতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy