গারুই নদী। আসানসোলের রেলপারে। নিজস্ব চিত্র।
এলাকা ভেসে না গেলেও, এ বার বর্ষায় ভয়াবহ আকার নিয়েছিল গারুই নদী। নদী সংস্কার শুরু করার পরেও, এমন পরিস্থিতি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আসানসোল পুরসভার। এই অবস্থায় নাব্যতা বজায় রাখতে কড়া পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে পুরসভা।
এলাকাবাসীর একাংশ জানান, সেপ্টেম্বরের শেষে প্রবল বর্ষায় ভেঙে গিয়েছে একটি কাঠের অস্থায়ী সেতু। সে সময়ে সেতু পারাপার করতে গিয়ে তলিয়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করায় রক্ষা পান। ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই দিতে হয়েছিল নদীর তীরবর্তী কয়েকশো বাসিন্দাকে।
পুরসভা সূত্রের দাবি, নদীর নাব্যতা না বাড়ালে প্রতি বছর প্রবল বর্ষায় এলাকা ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। সে জন্য গত প্রায় আট মাস ধরে নদীর পলি তোলার কাজ চলছে। শুধু পলি তুললেই সমস্যা মিটবে না। মেয়র বিধান উপাধ্যায় জানিয়েছেন, পলি তোলার পাশাপাশি, নাব্যতা ঠিক রাখতে নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। বিধান বলেন, “রেলপার অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র কারখানা আছে। সেগুলির বর্জ্য নিয়মিত নদীতেই ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া, স্থানীয় বাসিন্দারা পুরনো বাড়ির ভাঙা নির্মাণ সামগ্রীও নদীতে ফেলছেন। এই বর্জ্য ফেলা বন্ধ না হলে, পলি তুলে লাভ হবে না।” তিনি জানিয়েছেন, পুরসভার বোর্ড বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কারখানার মালিক ও বাসিন্দারা কেউ নদীতে বর্জ্য ফেললে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরিমানাও করা হবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলপারের ২৪ থেকে ২৯ নম্বর, এই ছ’টি ওয়ার্ডের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে গারুই নদী। এই ছয় ওয়ার্ড ঘনবসতিপূর্ণ। এ সব এলাকায় শতাধিক ছোট-মাঝারি কারখানা আছে। তার মধ্যে ব্যাগ ও আসবাবপত্র তৈরির কারখানার সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া, কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা পুরনো পলিথিনের প্যাকেট ও বোতল-সহ প্লাস্টিকের অন্য সামগ্রী কেনাবেচা করেন। অভিযোগ, তাঁরাও নদীতে বর্জ্য ফেলছেন। গারুই সংস্কারের প্রক্রিয়া দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন পুরসভার অন্যতম ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমূল হক। তিনি বলেন, “কোন এলাকায় বর্জ্য ফেলার প্রবণতা রয়েছে এবং কোন কারখানাগুলি থেকে নদীতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে নোটিস পাঠানো শুরু হয়েছে। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতেই হবে।”
পুরসভার এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অচিন্ত্য বারুই জানান, শহরের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া গারুই ও নুনিয়া নদী রানিগঞ্জের দামালিয়া অঞ্চলে দামোদর নদে মিশেছে। বর্ষায় এমনিতেই গারুই ও নুনিয়া ফুলেফেঁপে ওঠে। একই ভাবে, বৃষ্টি ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা জলের কারণে বরাকর নদ ও দামোদরে জলের চাপ বাড়ে। ফলে, দামালিয়ার কাছে যেখানে গারুই দামোদরে মিশেছে, সেখান থেকে জল ঢুকে আসানসোলকে প্লাবিত করে। এই পরিস্থিতিতে গারুইতে বর্জ্য ফেলা আইন করে বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানান মেয়র বিধান উপাধ্যায়।
বিধান বলেন, “বাসিন্দাদের সুবিধায় এলাকায় নতুন একটি সেতু তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু নদীর নাব্যতা কমে গেলে কোনও লাভই হবে না। ফলে, পুরসভার নির্দেশ কোনও ভাবে অমান্য করা যাবে না।” পুর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রেলপারের বাসিন্দাদের অনেকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy