ফাইল চিত্র।
উপপ্রধানের চারতলা বাড়ির ছবি প্রকাশ্যে আসতেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার দ্বিতীয় পর্যায়ের (আবাস প্লাস) তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার আবেদনের হিড়িক পড়েছে তৃণমূলে। নিজের বা পরিজনদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সমীক্ষক দলকে তো বটেই বিডিওকেও চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের নেতা ও তাঁদের পরিজনেরা। বিজেপির দাবি, কেন্দ্রের চাপে ও স্থানীয় মানুষজনের ক্ষোভে পড়ে তৃণমূল নেতাদের বোধোদয় হয়েছে। পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও এত দিন কেন ওই প্রকল্পে বাড়ি নেবেন না বলে আবেদন জমা পড়েনি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
রায়না ১ ব্লকের নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, সমসপুর গ্রামের শেখ মহম্মদ ইসমাইলের (শান্ত) বাবা শেখ আবুল মসুদ ও শ্বশুর গোলাম মর্তুজার নাম আবাস প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকায় রয়েছে। আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়ে গঠিত দল সমীক্ষা করে উপভোক্তাদের যোগ্যতা যাচাই করেছেন। তার পরেও মঙ্গলবার বিকেলে বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে বাড়ি নিতে ইচ্ছুক নন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। চিঠিতে শেখ আব্দুল মাসুদের দাবি, ‘‘সমীক্ষক দল আমার বাড়ির অবস্থা দেখে আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছিল। কিন্তু আমার বাড়ি ভালই আছে। সেই জন্য আমি আর বাড়ি নিতে ইচ্ছুক নই।’’ উপপ্রধান বলেন, ‘‘আমি দেখলাম তালিকায় আমার বাবা ও শ্বশুরের নাম রয়েছে। তাঁরা জানালেন, বাড়ি পাওয়ার যোগ্য হলেও তাঁরা আবাস প্রকল্পের সুবিধা নিতে চান না। আমিও আর বিতর্কে যেতে চাইনি।’’
ওই ব্লকের সেহেরা অঞ্চলের প্রধান দয়াবতী বাগের ছেলে সুব্রত বাগেরও নাম রয়েছে তালিকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুব্রত পঞ্চায়েতের কর আদায় করেন। তাঁর নাম কী ভাবে তালিকায়, তা নিয়ে বিতর্ক ওঠার পরেই নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দয়ামতীর দাবি, ‘‘বিতর্ক হচ্ছে দেখে নাম বাদ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নাম তোলার সময়ে আমরা মাটির বাড়িতে থাকতাম।’’
রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী পার্বতী ধাড়া মালিকের ছেলে, আড়ুই গ্রামের তন্ময় মালিকের নামও আবাস প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে। পার্বতী বিডিও-র কাছে ছেলের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের পাকা বাড়ি রয়েছে। সেই কারণে ওই প্রকল্পে বাড়ি নিতে ইচ্ছুক নন তাঁরা। খণ্ডঘোষের গুঁইর গ্রামের সুচিত্রা দত্তের দীর্ঘ দিনের পাকা বাড়ি। সুচিত্রার দাবি, তিনিও ওই তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার জন্য বিডিওকে জানিয়েছেন। মেমারির বাগিলা পঞ্চায়েতের কিসকিন্দা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য জিন্নাতারা বেগম, তাঁর স্বামী গিয়াসুদ্দিন শেখ-সহ ছ’জন পরিজনের নামও রয়েছে আবাস তালিকায়। তাঁরাও নাম বাদ দেওয়ার জন্য ব্লকে আবেদন করেছেন। রাধাকান্তপুরের এক তৃণমূল নেতার দোতলা বাড়িতে রঙের পোঁচ পড়ছে। ওই নেতার বাবার নামও আবাস তালিকায় রয়েছে। তিনিও নাম বাদ দিতে চিঠি দিয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাহাঙ্গির শেখের কেশবপুর গ্রামে চারতলা বাড়ি রয়েছে। বর্ধমান শহরে বাড়ি আছে। তার পরেও তাঁর স্ত্রী-সহ চার জনের নাম আবাস তালিকায় ওঠে। সে নিয়ে বিতর্ক হয়। দলের তরফে আবাস যোজনা নিয়ে কোনও অভিযোগ যাতে না ওঠে, সেই বার্তা দেওয়া হয়। তার পরেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে নেতা-সদস্যদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন নেতারা। তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষের উন্নতি হয়েছে। তার ছোঁয়া পঞ্চায়েতের সদস্যদেরও লেগেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার তৃণমূল করেন না বলেই স্বেচ্ছায় প্রকল্প থেকে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করছেন তাঁরা।’’ যদিও বিজেপির নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের পাল্টা দাবি, ‘‘বোধোদয় হলে এত দিন নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেননি কেন? নিজেদের মতো করে সুবিধা পেতে নাম তুলে রেখেছিল তৃণমূল। এখন কেন্দ্রের চাপে সব ঘেঁটে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy