আদালতে অসুস্থতার কথা বললেন অনুব্রত। ফাইল চিত্র।
আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতে বিচারকের সামনে শনিবার গরু পাচার-কাণ্ডে ধৃত অনুব্রত মণ্ডল বললেন ‘‘সবসময়ই অসুস্থ থাকি।’’
‘‘শরীর কেমন আছে?’’ বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর এই প্রশ্নের জবাবে আদালতে অনুব্রত বলেন, ‘‘শরীর বরাবর অসুস্থ। কাল জ্বর ছিল। কাশি।’’ বিচারক বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের বলেছিলাম, তাঁরা আপনাকে দেখছেন তো?’’ অনুব্রতের জবাব, ‘‘ওষুধ খাচ্ছি।’’ শুনে বিচারক বলেন, ‘‘অসুবিধা হলে চিকিৎসককে বলতে দ্বিধা বোধ করবেন না।’’ বিচারকের কথার প্রেক্ষিতে অনুব্রত বলেন, ‘‘আচ্ছা।’’ এর পরই আদালতকক্ষে বসেন অনুব্রত।
বস্তুত, অনুব্রতের শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। যদিও জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই। অসুস্থতার কারণে গ্রেফতারের আগে সিবিআই হাজিরা এড়িয়েছিলেন অনুব্রত। এমনকি, এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন। দক্ষিণ ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করানোর কথাও তৃণমূলের এই দাপুটে নেতা ভেবেছিলেন বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল। এমনকি, ডাক্তারকে দিয়ে জোর করে ‘বিশ্রামের’ কথা লিখতে অনুব্রত নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী তাঁকে পরীক্ষা করেন। চিকিৎসকের বিস্ফোরক দাবি, তিনি প্রেসক্রিপশন নয়, স্রেফ সাদা কাগজে অনুব্রতকে বিশ্রামের পরামর্শ লিখে দেন। আর সেটা নাকি করেছেন ‘রোগী’ অনুব্রতের নির্দেশেই!
শনিবার আদালতে সেই প্রসঙ্গে টেনে সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমারও বলেন যে, প্রেসক্রিপশন লেখাতে চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া হত। এই ঘটনাপ্রবাহে আদালতে পেশের পর নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা যে ভাবে খোদ বিচারকের সামনে তুলে ধরলেন অনুব্রত, তা আলাদা তাৎপর্য পেয়েছে।
সিবিআইয়ের ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হয়ে আদালতে অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘‘বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা জানানো হয়েছিল। তখন কোনও জবাব দেয়নি সিবিআই। পরের দিন আবার নোটিস পাঠানো হয়। এতেই সিবিআইয়ের স্বচ্ছতা নষ্ট হয়েছে। ১৪ দিনের বিশ্রামের কথা মেডিক্যাল রিপোর্ট সহকারে দেওয়া হয়। সিবিআই কী ব্যবহার করেছে সেটা দেখা উচিত। অনুব্রত পালিয়েও যাননি, গা-ঢাকাও দেননি। উনি কখনই সিবিআইকে এড়াননি। এক বার উনি সুস্থ ছিলেন, সে সময় নিজেই সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন।’’ অনুব্রতের সহযোগিতার দাবির পাল্টা সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘উনি (অনুব্রত) বলছেন, সবসময় সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু অভিযুক্ত জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে সব রকম চেষ্টা চালিয়েছেন’’। অনুব্রতের কন্যাও অসহযোগিতা করছেন বলে দাবি সিবিআইয়ের।
তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী এ-ও দাবি করেন, ‘‘কোটি কোটি টাকা ওঁর (অনুব্রত) নয়তো ওঁর মেয়ের কিংবা ওঁর পরিচিতের অ্যাকাউন্ট থেকে এ দিক-ও দিক হয়েছে। প্রত্যেকটা প্রমাণ হাতে আসার পর ওঁকে কথা বলার অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ওঁকে বার বার ডাকা হয়েছে। কিন্তু বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। উনি প্রভাবশালী। ওঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের যোগসূত্র রয়েছে। ভুয়ো প্রেসক্রিপশন লিখতে চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওঁর দেহরক্ষী মধ্যস্থতাকারী। এটা কোনও একার ব্যবসা নয়। একটা চক্র।’’ শেষে অনুব্রতের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক। অনুব্রতকে আরও চার দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy