Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

হেঁশেল ছেড়ে জমিতে নেমে ‘কৃষকরত্ন’

কৃষিক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য এই পুরস্কার দেয় রাজ্য সরকার। দেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা ও শংসাপত্র। এ বারই প্রথম কোনও মহিলা সঙ্ঘ এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হল। লোহাচুর এলাকায় পাকা রাস্তার পাশে সঙ্ঘের ভবন।

লোহাচুরে খেতে কাজে ব্যস্ত সঙ্ঘের মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

লোহাচুরে খেতে কাজে ব্যস্ত সঙ্ঘের মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০১
Share: Save:

বছর পনেরো আগেও তাঁদের কাজের পরিধি ছিল শুধু হেঁশেল। এখন নিজেরা চাষ করেন, ফসল তুলে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রিও করেন। সেই সূত্রে স্বয়ম্ভর হয়েছেন। এ বার ‘কৃষকরত্ন’ পুরস্কারও পেতে চলেছেন পূর্বস্থলী ২ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম লোহাচুরের অন্নপূর্ণা সবজি উৎপাদন সঙ্ঘের মহিলারা। মঙ্গলবার বর্ধমানে মাটি উৎসবে সঙ্ঘের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কৃষিক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য এই পুরস্কার দেয় রাজ্য সরকার। দেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা ও শংসাপত্র। এ বারই প্রথম কোনও মহিলা সঙ্ঘ এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হল। লোহাচুর এলাকায় পাকা রাস্তার পাশে সঙ্ঘের ভবন। সদস্যেরা জানান, ২০১৪ সালে ভবনের জন্য জমি কেনেন তাঁরা। ভবন তৈরিতে অর্থ বরাদ্দ করে জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর। সঙ্ঘে রয়েছে গ্রামের ২০টি গোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে আরও একটি গোষ্ঠী। সব মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা ২৪০। মহিলারা জানান, চাষে ভাল আয় করে সংসারের অনেক খরচ তাঁরাই জোগান। এমনকী, এখন নামমাত্র সুদে ঋণও দেওয়া হয় সঙ্ঘের তরফে।

তবে বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামের অর্থনীতির হাল এমন ছিল না। চাষাবাদ থেকে পুরুষেরা যা আয় করতেন তাতে অভাব মিটত না। ২০০১ সালের পরে গ্রামে মহিলাদের নিয়ে দু’টি গোষ্ঠী তৈরি হয়। তারা গতানুগতিক ধান, আলু ছেড়ে আনাজ চাষ শুরু করেন। তাদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামে ক্রমশ বাড়তে থাকে গোষ্ঠীর সংখ্যা।

সঙ্ঘের সদস্য চন্দনা মাহাতো, জবা মাহাতো, চায়না মাহাতোরা জানান, তাঁরা প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন। চুক্তি বা ঠিকায় জমি নিয়ে চাষাবাদ করা হয়। ফুলকপি,বাঁধাকপি, পালংশাক, মটরশুঁটির মতো ফসল তোলা ও বাজারে পাঠানোর কাজও তাঁরা নিজে হাতে করেন। নিজেরাই সমস্ত কাজ করায় লাভ থাকে বেশি। সদস্যদের অনেকে জানান, বাড়ির কাজ ছেড়ে চাষের কাজে নামায় কেউ-কেউ পরিবারে আপত্তির মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর পরে সেই সমস্যা আর নেই।

মাটি উৎসবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেবেন সঙ্ঘের সম্পাদিকা ফুলতূলি মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘একটি ডাল ভাঙার যন্ত্র, চাষের জন্য হ্যান্ড-ট্রাক্টর আর সেচের জন্য একটি সাবমার্সিবলের ব্যাপারে সহযোগিতা পেলে মেয়েরা আরও সফল হবে।’’ উদ্যানপালন বিভাগের এক কর্তা পলাশ সাঁতরা বলেন, ‘‘লোহাচুরের মহিলার যে ভাবে কাজ করেছেন তা গ্রামীণ এলাকার অন্য মহিলাদের পথ দেখাবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE