Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Bardhaman

বিচার চেয়ে জেলাশাসকের কার্যালয়ে বৃদ্ধা

বৃদ্ধার দাবি, প্রশাসনের কাছে আবেদন করতেই তৃণমূলের কয়েক জন তাঁর বাড়িতে চড়াও হন। বড় ছেলে বাজান শেখকে মারধর করে কেড়ে নেন স্বাস্থ্যসাথী ও রেশন কার্ড।

Old lady at District magistrate office of bardhman

চলছে ধর্না। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১১
Share: Save:

হাতে জাতীয় পতাকা। গলায় ঝুলছে বি আর অম্বেডকরের ছবি। বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্রে নেতাজি মূর্তির সামনে থেকে তপ্ত রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে বৃদ্ধা এসে পৌঁছেছেন জেলাশাসকের কার্যালয়ের ফটকে। সেখানে দুই ছেলে আর এক মেয়েকে পাশে বসিয়ে যে অভিযোগ তিনি করেছেন, তা শুনে চমকে উঠেছেন পথচলতি অনেকেই।

মেমারি ১ ব্লকের দেবীপুর পঞ্চায়েতের হিতমপুর গ্রামের বাসিন্দা কোহিনুর শেখের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের অত্যাচারে চাষ বন্ধ। বারবার মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিচ্ছে শাসক দলের লোকজন। কেড়ে নেওয়া হয়েছে রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড।’’ বিচার চাইতেই তাঁরা জেলাশাসকের কার্যালয়ে এসেছেন। কোহিনুর জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী কংগ্রেস করতেন। তিনি জীবিত থাকাকালীন দুই মেয়ের বিয়ে হয়। বিবাহযোগ্য আরও একটি মেয়ে রয়েছে তাঁর। রয়েছে দুই পুত্রসন্তানও। বৃদ্ধার দাবি, গত বছর কয়েক ধরে তিনি ছোট মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সে কারণে জমি বিক্রি করা প্রয়োজন। পুকুর-সহ প্রায় ১১ বিঘা জমি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভূমি দফতরে গিয়ে জানতে পারেন, জমির কোনও রেকর্ড সেখানে নেই। নথি লোপাট করা হয়েছে। সুরাহা চেয়ে প্রশাসনের দুয়ারে যেতেই তৃণমূলের কিছু নেতার রোষানলে পড়েছে তাঁর পরিবার।

বৃদ্ধার দাবি, প্রশাসনের কাছে আবেদন করতেই তৃণমূলের কয়েক জন তাঁর বাড়িতে চড়াও হন। বড় ছেলে বাজান শেখকে মারধর করে কেড়ে নেন স্বাস্থ্যসাথী ও রেশন কার্ড। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রেশন পাচ্ছেন না। জেলা ও ব্লক স্তরে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও ফল মেলেনি। কোহিনুর জানান, তাঁরা রাজভবনের সামনেও ধর্নায় বসেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের তুলে দেয়। কোহিনুরের ছোট ছেলে জীবান শেখ জানান, তাঁরা বিজেপি নেতাদের কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। সে কারণেই তাঁদের উপরে চড়াও হন তৃণমূলের নেতারা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের ১১ বিঘা জমিতে চাষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হিমঘরে রাখা প্রায় ৪০ কুইন্টাল আলু বিক্রি করতে দেওয়া হচ্ছে না। আলুর বন্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’’ কোহিনুরের মেয়ে শেখ মুমতাজের আক্ষেপ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন সব জেনেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলার সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানিয়েছেন জীবান। তাঁর দাবি, মহকুমাশাসককে অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।

ঘটনাচক্রে, এ দিনই বিকেলে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। ওই বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথাও বলেন। জেলাশাসকের সঙ্গে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। বৃদ্ধার অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে স্বপন বলেন, ‘‘এখন দুয়ারে সরকার চলছে। দুয়ারে দুয়ারে দিদির দূতেরা যাচ্ছেন। সেই বিষয়গুলি উহ্য রেখে সাংবাদিকেরা খবর করার জন্য ওঁদের জেলাশাসকের অফিসের সামনে বসিয়ে দিয়েছেন।’’ যদিও জীবান স্পষ্টই জানান, তাঁরা জেলাশাসকের কাছে বিচার চাইতে এসেছেন। কারও কথায় তাঁরা আসেননি।

জীবান গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির বুথ এজেন্ট ছিলেন। বিজেপি নেতা মৃত্যঞ্জয় প্রামাণিক এবং কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার প্রশাসনের কাছে ওই পরিবারের জন্য সুবিচার চেয়েছেন। মেমারির তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman District magistrate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy