পোড়া ট্রাক্টর। মন্তেশ্বরের তুল্ল্যা গ্রামে। ছবি: সুদিন মণ্ডল
রেশনে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ বাধল পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে। শুশুনিয়া পঞ্চায়েতের তুল্ল্যা গ্রামে শুক্রবার রাতে এই সংঘর্ষে দুই মহিলা-সহ জনা দশেক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের জেরেই এই গোলমাল হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে বাড়ি, মোটরবাইক। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য গ্রামীণ বিবাদের জেরে এই ঘটনা বলে দাবি করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার দুপুরে। এলাকার এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে পরিমাণে জিনিস কম দেওয়া, কেরোসিনের দাম বেশি নেওয়া, গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার-সহ নানা অভিযোগ পেয়ে সে দিন দুপুরে মন্তেশ্বরের খাদ্য আধিকারিক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ ভাণ্ডারপুরে ওই দোকানে যান। তখন বহু উপভোক্তা ডিলারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান।
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ওই বিক্ষোভের সময়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান পার্থ ঘোষের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান তুল্ল্যা গ্রামের বাসিন্দা, অঞ্চল যুব তৃণমূল নেতা নাসিরউদ্দিন খান ওরফে বিপু। নাসিরুদ্দিন ওই রেশন ডিলারের পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এর পরে সন্ধ্যায় তুল্ল্যা বাজারে বিষয়টি নিয়ে নাসিরউদ্দিনের গোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে তৃণমূল কর্মী হালিম খান-সহ কয়েকজনের বচসা বাধে। নাসিরউদ্দিনের অনুগামীরা দু’জনকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
এর পরেই গোলমাল বেধে যায়। অভিযোগ, নাসিরউদ্দিনের অনুগামীরা তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালান। সাত-আটটি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়। মারধর করা হয় বাড়ির লোকজনকে। এমনকি, এক অন্তঃসত্ত্বাও মারের হাত থেকে রেহাই পাননি বলে অভিযোগ। এই ঘটনার খানিক পরেই বাজারের কয়েকটি দোকান ও কিছু পাল্টা হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। একটি ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, গোলমালের সময়ে দু’রাউন্ড গুলিও চলেছে।
হালিম খান মন্তেশ্বর থানায় অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, ওই রেশন ডিলারের সঙ্গে বেআইনি লেনদেনে জড়িত নাসিরউদ্দিন। গ্রামবাসীর একাংশ তার প্রতিবাদ করায় হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত খাইরুল শেখ, শেখ শুকুর আলি, আশাদুল্লা খানেরা দাবি করেন, নাসিরুদ্দিনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁরা দলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি আহমেদ হোসেন শেখের সঙ্গে দলের কাজ করছেন। সে আক্রোশেই তাঁদের উপরে হামলা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
নাসিরউদ্দিন অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, কিছু বহিরাগত তৃণমূলের পতাকা নিয়ে গ্রামে অশান্তি পাকিয়েছে। তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর, ট্রাক্টরে আগুন লাগানো হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক সৈকত পাঁজার বক্তব্য, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে এক দল লোক আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছে।’’ মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা দলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি আহমেদের অভিযোগ, ‘‘দলের নাম করে কেউ যদি দুর্নীতিকে আড়াল করতে চায়, তার প্রতিবাদ আমাদের কর্মীরা বারবার করবেন। তা করতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন আমাদের কর্মীরা।’’
যদিও ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ কথা মানতে চাননি তৃণমূলের মন্তেশ্বর ব্লক সভাপতি আজিজুল হক। দলের নেতা তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডুরও বক্তব্য, ‘‘গ্রামীণ বিবাদকে ঘিরে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রুব দাস বলেন, ‘‘বচসা থেকে মারপিটের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ গুলি চলার ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশের দাবি।
কালনা মহকুমা খাদ্য নিয়ামক অভিজিৎ বেজ বলেন, ‘‘রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েছিলেন ফুড ইনস্পেক্টর। রিপোর্ট পাওয়ার পরে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল ও মে মাসে রেশনে কেরোসিনের দাম কমেছিল। যে ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি কত টাকায় কেরোসিন বিক্রি করেছিলেন, তা দেখা হচ্ছে। মহকুমা রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুশীল ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘মন্তেশ্বরের ওই রেশন ডিলার যে দামে কেরোসিন কিনেছিলেন, সেই দামেই বিক্রি করছিলেন। কিছু লোক তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy