ঘোষ পরিবারের সদস্যেরা। -নিজস্ব চিত্র।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য জীবিত অবস্থাতেই মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন বাবা। সেই মতো বাবা নারায়ণচন্দ্র ঘোষের মৃত্যুর পর বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘অ্যানাটমি’ বিভাগে দেহ তুলে দিয়েছেন সন্তান। শুধু এইটুকু করেই দায়িত্ব সারেননি স্ত্রী পুষ্পদেবী, পুত্র উৎপল ঘোষ এবং পুত্রবধূ চম্পা ঘোষ। নারায়ণচন্দ্রের দেখানো পথে হেঁটে তাঁরাও মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি, নারায়ণচন্দ্রের স্কুল পড়ুয়া নাতি-নাতনিও একই পথের পথিক হওয়ার শপথ নিয়েছেন।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার আবুজহাটি ১ নম্বর পঞ্চায়েতের পাঁচশিমুল গ্রামে বসবাস করেন ঘোষ পরিবারের সদস্যরা। পরিবার কর্তা নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। গত ৮ জানুয়ারি তিনি প্রয়াত হন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি সাধনের জন্য মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তিনিই এখন এলাকাবাসীর পথ প্রদর্শক হয়ে উঠেছেন।
নারায়ণচন্দ্রের ছেলে উৎপল ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁর বাবা সবসময় চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতেন। অন্য চিকৎসকদের সঙ্গেও সেইসব বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনাও করতেন। সব সময়েই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি চাইতেন। কেউ ডাক্তারি পড়ছেন জানলে তাঁকেও অনুপ্রাণিত করতেন। উৎপল জানান, তাঁর বাবা মনে করতেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের জন্য মরণোত্তর দেহ দান অত্যন্ত জরুরি। সেই ভাবনা থেকেই মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেন। সেই অঙ্গীকারকে মান্যতা দিয়ে তাঁরা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে ৮ জানুয়ারি বর্ধমান হাসপাতালের ‘অ্যানাটমি’ বিভাগে বাবার মৃতদেহ তুলে দিয়েছেন।
মৃত চিকিৎসকের স্ত্রী পুষ্প ঘোষ শনিবার বলেন, “প্রথম দিকে স্বামীর ভাবনার সঙ্গে একমত হতে পারিনি। পরে উপলব্ধি করি বিষয়টি। কারণ মৃত্যুর পর দেহ দাহ করে আখেরে কোনও লাভ হয় না। বরং সেই দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য দেশের ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া অনেক বেশি দরকার। ’’ সেই বাস্তবতা উপলব্ধি করে তাঁর ছেলে উৎপল ও বৌমা চম্পা চার বছর আগেই দেহদানের অঙ্গীকার করে ফেলেছেন। আর স্বামীর দেখানো পথে হেঁটে স্বামীর মৃত্যুর পাঁচ দিন পরে তিনিও স্বেচ্ছায় মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার পত্রে সই করেছেন। ঘোষ পরিবারের সকল সদস্যের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে ।
পাঁচশিমুল গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ পাল, প্রশান্ত ঘোষরা জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য তাঁদের এলাকার ঘোষ পরিবারের সকল সদস্যের এমন ভাবনা প্রকৃত অর্থেই অনবদ্য। সবার মধ্যে এমন চিন্তাভাবনা জেগে উঠলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই দেশ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণে সক্ষম হবে। উপকৃত হবে দেশের কোটি কোটি মানুষ। ঘোষ পরিবারের সদস্যদের এমন চিন্তাভাবনার তারিফ করেছেন জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার। তিনি বলেন, “অভিনব চিন্তাভাবনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য পরিবারের একজনের দেখানো পথ অনুসরণ করে পরিবারের সবার মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এক কথায় অনবদ্য। এতে সত্যি আমাদের দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মৃদ্ধ হবে।” ঘোষ পরিবারের সদস্যদের এমন চিন্তা ভাবানার কথা জেনে অবিভূত বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কুনাল কান্তি দে। তিনি বলেন, “ঘোষ পরিবারের সদস্যদের এমন প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা বাস্তবেই একটা নিদর্শন। ওঁরা পথ প্রদর্শক। এমন প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা সবার মধ্যে দেখা দিলে ডাক্তারি পড়ুয়ারা যেমন উপকৃত হবে তেমনই চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও উন্নতি হবে।“
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy