Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Air pollution

চালকলের ছাইয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত, চিঠি

রাজ্যে ১২০০টির মতো চালকল রয়েছে। প্রতিদিন ৩০ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়। চাল উৎপাদনের সঙ্গে দূষণের অভিযোগ ওঠে সর্বত্রই।

ছাই জমে স্তূপ রাস্তার ধারে। নিজস্ব চিত্র

ছাই জমে স্তূপ রাস্তার ধারে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৬
Share: Save:

জানলা খোলার উপায় নেই। বারান্দার গ্রিলেও দিনভর পর্দা ফেলে রাখতে হয়। খালি চোখে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাও অসুবিধার। এমনকি, জমির ফসলের সবুজ পাতাও কালো হয়ে পড়ছে। চালকলের ছাইয়ের কারণেই এই হাল, অভিযোগ পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহের বাসিন্দাদের। মাঝেমধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অভিযান চালায়। কিন্তু ‍ছাই-দূষণে রাশ পড়ে না, দাবি তাঁদের। চালকলের ছাই নিয়ে চিন্তিত ‘বেঙ্গল রাইসমিল অ্যাসোসিয়েশনও’। ওই সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সংগঠনের আর্জি, সরকারের উদ্যোগে আইআইটি, এনআইটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ মানের কোনও প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে ছাইয়ের ভবিষ্যৎ ঠিক করুক।

সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘আমরা সংগঠনগত ভাবে একটা উদ্যোগ করেছিলাম। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কাজে লাগেনি। সরকার উদ্যোগী হলে ছাইকে কাজে লাগিয়ে নানা রকমের শিল্প গড়ে উঠতে পারে। কর্মসংস্থানও হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রতিটি জেলায় ‘এক জানালা পদ্ধতি’, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য বকেয়া থাকা উৎসাহ-ভাতা প্রদান, রাজ্য বিদ্যুৎ ব্ন্টন নিগমের বিলের হার কমানোরও দাবি জানিয়েছে চালকল মালিকদের ওই সংগঠন।

রাজ্যে ১২০০টির মতো চালকল রয়েছে। প্রতিদিন ৩০ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়। চাল উৎপাদনের সঙ্গে দূষণের অভিযোগ ওঠে সর্বত্রই। সংগঠনের দাবি, চালকল থেকে প্রতিদিন ১২০০ টন ছাই তৈরি হয়। যার বেশির ভাগটাই রাস্তা, পুকুর পাড়, খেত কিংবা নদীর পাড়ে ফেলা হয়। পূর্ব বর্ধমানে চালকলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। বর্ধমান থেকে আরামবাগ বা বাঁকুড়া যাওয়ার রাস্তা ধরে এগোলেই দেখা যায়, দু’পাশে ছাই পড়ে কালো হয়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে রাস্তার ধারে বা দামোদরের পাড়ে চালকলের ছাই ফেলা হয়।

রায়নার বাসিন্দা সুনন্দা সামন্ত বলেন, ‘‘ঘুম থেকে উঠে আমাদের প্রথম কাজ, ছাদ থেকে চালকলের নোংরা সাফ করা। দিনভর চালকলের ছাইয়ের জন্য জানলা পর্যন্ত খুলতে পারি না।’’ গলসির জাহাঙ্গির কবীরের অভিযোগ, ‘‘খালি চোখে বাইরে বেরোলে ছাই উড়ে এসে পড়ে। রাস্তার দু’ধারে ছাই পড়ে থাকে। যাতায়াত করা যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ বর্ধমানের আলমগঞ্জ এলাকায় পুরনো চালকলগুলির আশপাশে ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে। সেখানকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, ছাইয়ের দূষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত।

রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বিষয়টি দেখবে।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (অপারেশনস্‌ অ্যান্ড এগজ়িকিউশন) সুব্রত ঘোষের দাবি, ‘‘এটা একটা নীতির বিষয়। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’’ দুর্গাপুর এনআইটির অধ্যাপক তমাল মণ্ডলের দাবি, ‘‘ছাই থেকে সিলিকা বার করা হয়। তা বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম তৈরি, রং, কাচশিল্পে কাজে লাগবে। বাকিটা থেকে পটাশিয়াম, ফসফরাস পাওয়া যায়। এর সঙ্গে চর্মশিল্পের বর্জ্য থেকে পাওয়া নাইট্রোজেন মিশিয়ে সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Air pollution Rice Mill Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy