Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Durgapur Expressway

নজর রেখেও দুর্ঘটনায় রাশ পড়েনি, চিন্তা

তেজগঞ্জ থেকে নবাবহাট—দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে বর্ধমান থানার এই অংশে ক্রমাগত দুর্ঘটনা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে ট্রাফিক পুলিশের।

তেজগঞ্জ মোড়ে লেন ভেঙে যাতায়াতে বিপদ বাড়ে বলে অভিযোগ। ছবি: উদিত সিংহ

তেজগঞ্জ মোড়ে লেন ভেঙে যাতায়াতে বিপদ বাড়ে বলে অভিযোগ। ছবি: উদিত সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৪
Share: Save:

কখনও সাইকেল নিয়ে পেরনোর সময়ে, আবার কখনও ঘুড়ি ধরতে রাস্তায় উঠে পড়ায় ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা বা আচমকা এক লেন ভেঙে অন্য লেনে ঢুকতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে। তেজগঞ্জ থেকে নবাবহাট—দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে বর্ধমান থানার এই অংশে ক্রমাগত দুর্ঘটনা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে ট্রাফিক পুলিশের।

বর্ধমান থানা সূত্রে জানা যায়, উল্লাস মোড় থেকে নবাবহাট, এই কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই গত এক বছরে ১৫৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ৬১টি দুর্ঘটনায় ৬৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ‘নজর মিনার’ থেকে বারবার নানা রকম ব্যবস্থা করার পরেও দুর্ঘটনা কেন কমছে না, তা দেখার জন্য সম্প্রতি এলাকা ঘুরে দেখেন রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (ট্র্যাফিক) তন্ময় রায়চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়-সহ জেলা পুলিশের অন্য আধিকারিকেরা। পুলিশের কর্তাদের ধারণা, মূলত তিনটি কারণে দুর্ঘটনা কমছে না— অতিরিক্ত গতি, লেন ভেঙে যাতায়াত ও সচেতনতার অভাব।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমান জেলায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে ৭২ কিলোমিটার। মাত্র তিন জায়গায় ট্রাক বা গাড়ি রাখার জায়গা রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সে সব জায়গায় ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। সে জন্য গলসির পর থেকে ডানকুনি টোলপ্লাজা পর্যন্ত দু’ধারে অসংখ্য গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। রাস্তার ধারে গাড়ি রাখার জায়গাগুলি উপচে পড়ে। পুলিশের দাবি, একটি থানা এলাকার পুলিশ তাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলে অন্য থানা এলাকায় ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়িগুলি। তাতে অসুবিধায় পড়ে পুলিশ। ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি হয়। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’

ওই রাস্তার নিত্যযাত্রীরা অভিযোগ করেন, যাত্রিবাহী বিভিন্ন গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে ছোটে। নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে অনেক গাড়ি ডিভাইডারে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে। কয়েক দিন আগে কলকাতার দিকে যাওয়া একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে পিছনে ধাক্কা দেওয়ায় মৃত্যু হয় দুর্গাপুরের দুই বাসিন্দার। গাড়ি চালকদের অনেকে দাবি করেন, মোটা টাকা টোল দিয়ে নির্বিঘ্নে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে এই রাস্তা। কিন্তু গাড়ির সামনে আচমকাই অনেকে এসে পড়েন। ডিভাইডারে ঘাস খাওয়ানোর জন্য গবাদি পশুদের নিয়ে আসেন আশপাশের বাসিন্দারা। ওই সব পশুর চলাচলে গাড়ির সমস্যা হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে বেচারহাটে এক্সপ্রেসওয়েতে ঘুড়ি ধরতে এসে দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যু হয় এক কিশোরের। জেলার পুলিশকর্তাদের দাবি, ক্রমাগত প্রচার চালিয়েও সচেতন করা যাচ্ছে না অনেককে। রাস্তায় বেশ কয়েকটি জায়গায় বেআইনি ‘কাটিং’ রয়েছে, যা বন্ধ করতে গেলে কিছু গ্রামবাসী বাধা দেন বলেও দাবি পুলিশের। পুলিশকর্তারা জানান, কাটা অংশ দিয়ে অহরহ লেন ভাঙা চলছে।

ডিআইজি-র সঙ্গে বৈঠকের পরে জেলা পুলিশ ঠিক করেছে, স্কুলের সময়ে ওই রাস্তায় অতিরিক্ত ট্র্যাফিককর্মী দেওয়া হবে। রাস্তার ডিভাইডারে থাকা টিনের পাঁচিলগুলি আরও উঁচু করা হবে, যাতে কেউ টপকে আসতে না পারেন। নজর মিনারগুলি থেকে আরও বেশি পর্যবেক্ষণের সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া ‘কাট আউট’গুলির শেষে ‘ব্লিংকার’ আলোর ব্যবস্থা, সতর্কতামূলক বোর্ড লাগানোর কথা ভাবা হয়েছে। যে সব গ্রামীণ রাস্তা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে এসে যুক্ত হচ্ছে, সেগুলির মুখেও গতি কমানোর জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভেবেছে পুলিশ। এ ছাড়াও রাস্তায় প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা করার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বর্ধমান থানা।

পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা কমানোর জন্যে জেলা জুড়ে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ওই অংশ পরিদর্শন করে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Expressway Accident Traffic Tejganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy