কারবার: কারখানায় ভর্তি ফিনাইল, ডিস্টিলড ওয়াটার।
কাঠা তিনেক জায়গার উপর খড়ের চালা ঘর। বাইরে ডাঁই দিয়ে পড়ে রয়েছে মদের বোতল, প্লাস্টিকের জার, ছোট-বড় বোতল। ঘরের ভেতরে মজুত রয়েছে যন্ত্রপাতি, রকমারি রং ও রাসায়নিক। পানুহাটের বারুজীবিপল্লির এই ঘরেই বছর দুয়েক ধরে অ্যাসিডের কারবার চালাচ্ছিলেন বিশ্বজিৎ দত্ত। সোমবার সিআইডির এক প্রতিনিধি দলের হাতে ২২০০ লিটার অ্যসিড সহ ধরা পড়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে তোলা হলে সিজেএম সঞ্জয়রঞ্জন পাল ন’দিন সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
মণ্ডলহাটে সতেরো বছর ধরে বাস ওই পরিবারের। প্রতিবেশিরা জানান, বাড়ি বাড়ি কাপড় ফেরি করেই সংসার চালাতেন বছর বত্রিশের বিশ্বজিৎ। বাড়িতে রয়েছেন প্রৌঢ় দিনমজুর বাবা, মা, দুই দাদা ও বৌদি। তবে বিয়ের পর থেকে বছর দশেক ধরে স্ত্রী বুল্টিদেবী ও ছেলে বাসুদেবকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি বারুজীবি পল্লিতেই থাকতেন বিশ্বজিৎ। শ্বশুরবাড়ি লাগোয়া কাঠা তিনেক জায়গায় বছর দুয়েক আগে অ্যাসিডের কারখানাও তৈরি করেছিলেন তিনি। জানা যায়, এই ব্যবসায় তাঁকে সঙ্গ দিতেন মামা মাধব মহলাদার। পাশে মামারবাড়িতেই মূলত অ্যাসিড মজুত রাখা হতো বলে জানা গিয়েছে।
সিআইডি কর্তাদের দাবি, বিশ্বজিৎ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অ্যাসিড বিক্রি করতেন। এর আগেও তাঁকে ধরার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু নাগাল মেলেনি। কিন্তু এ বার ক্রেতা সেজে অ্যাসিডের বরাত দিতেই বিশ্বজিৎ নবাবহাটে চলে আসেন। বমাল তাঁকে ধরে ফেলে সিআইডি। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের ব্লিচিং পাউডার, ফিনাইল ও ডিস্টিলড জলের ব্যবসা রয়েছে। খাজুরডিহি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ট্রেড লাইসেন্সও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ব্যবসাকে সামনে রেখে অ্যাসিড তৈরি করে পাচার করাই তাঁর মূল কারবার ছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
আদালতে তোলার পথে ধৃত বিশ্বজিৎ। নিজস্ব চিত্র
এ দিন বিশ্বজিতের শ্বশুর, পেশায় আইসক্রিম বিক্রেতা রঞ্জিত বিশ্বাস দাবি করেন, গাড়ির ইঞ্জিন, ব্যাটারির জন্য জল (ডিস্টিলড ওয়াটার) তৈরি করত বিশ্বজিৎ। ক্রেতা ছিলেন মূলত টোটো মালিকেরা। এর সঙ্গে শৌচাগার পরিষ্কারের ফিনাইল তৈরি করে কাটোয়ার বিভিন্ন স্টেশনারি দোকানে সরবরাহ করতেন তিনি। কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে সাজানো ব্যাটারির জলের জ্যারিকেন, ফিনাইলের বোতল। ছেলের নামে ফিনাইলের নামও দিয়েছিল ‘বাসুদেব টয়লেট ক্লিনার’। ৫০০ মিলি প্রতি ৩০টাকা ও ১০০০ মিলি প্রতি ৫৭ টাকা দরে বিক্রি হত সেই ক্লিনার। ব্যাটারির জল ‘মা কালী ব্র্যান্ড’ নামে বিক্রি হতো। তাঁর মা সরস্বতী দত্তের দাবি, ‘‘ছেলে শুধু জল আর ফিনাইলের ব্যবসা করে। দামী অ্যাসিডের ব্যবসা করার মতো সামর্থ্য ছিল না। আমার ছেলে নির্দোষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy