Advertisement
E-Paper

Durga Puja 2021: কুমিরকোলার বন্দ্যোপাধ্যায়দের পুজোয় থাকেন মুসলিম প্রতিবেশীরাও

কথিত আছে, দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে সন্তানহীন জমিদার প্যারিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজোর সূচনা করেন কুমীরকোলায়।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১ ২২:১৬
Share
Save

জাত বা ধর্মের বিচার নেই। পূর্ব বর্ধমানের কুমিরকোলা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজোয় থাকেন গ্রামের নিম্নবর্ণীয়রা। পুজোয় তাঁদের অবাধ অধিকার। থাকেন মুসলিমরাও। সকলে মিলে জাতি-ধর্ম-বর্ণের গণ্ডি টপকে পুজোকে এক উৎসবের চেহারা দেন। কয়েকশো বছর আগে শুরু হওয়া এই পুজো তাই আজও অন্য রকম— ঐতিহ্যে ও মাহাত্ম্যে।

কথিত আছে, দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে সন্তানহীন জমিদার প্যারিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজোর সূচনা করেন কুমীরকোলায়। তার পর একে একে তাঁর চার পুত্র— দুর্গাপ্রসাদ, সারদাপ্রসাদ, বরদাপ্রসাদ, অন্নদাপ্রসাদ এবং দুই কন্যা— কৃপাময়ী ও ব্রহ্মময়ী জন্ম নেয়। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা নন্দরাম ব্রহ্মচারী প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে হুগলি থেকে পালিয়ে গভীর জঙ্গলে খণ্ডঘোষের কুমিরকোলা গ্রামে দামোদরের ধারে প্রতিষ্ঠা করেন বলরাম রেবতী মন্দির। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের গৃহদেবতা বলরাম রেবতী। তাই দুর্গাপুজোর চার দিন দুর্গা মন্দিরেই বলরাম রেবতী অবস্থান করেন।

এখনও প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে বংশানুক্রমিক ভাবে সব কিছু হয়। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের জামাতা কুমারেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দেবীর মূর্তি গড়েন পাত্রসায়রের কুম্ভকার। দু’শো বছর ধরে এই রীতি চালু আছে। পুরোহিত স্থানীয় রূপসা গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবার। আর গুরু বংশ হল বাঁকুড়ার ইন্দাসের তান্ত্রিক মাধব সিদ্ধান্ত ও গৌরী সিদ্ধান্ত। এঁরাই পুজো পরিচালনা করেন। এখানে দেবীমূর্তির কাঠামোয় প্রথম মাটি পড়ে রথের দিন। আর দ্বিতীয় মাটি দেওয়া হয় জন্মাষ্টমীতে। প্রতিমা এক চালার। ডাকের সাজে সোনালি জরি দিয়ে মাকে সাজানো হয়। দেবী তপ্তকাঞ্চন বর্ণা। দেবীর আদেশানুসারে এখানে শাড়ি হয় এগারো হাতের।’’

অষ্টমীতে সন্ধি পুজোয় দেবী চামুণ্ডার নামে এক মণ ও এক সের চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। দুর্গাকে এখানে লাল রঙ্গন ফুলের মালা পরানো হয়। সেই মালা মায়ের গলা থেকে ঘট পর্যন্ত ঝুলে থাকে। মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুসারে সন্ধি পুজোয় দেবীকে পরানো হয় ১০৮ হাত লম্বা একটি লম্বা রঙ্গন ফুলের মালা। বিজয়া দশমীর দিন এখানে সিঁদুর খেলা হয় না। সন্ধিপুজো শেষ হলে বাড়ির মেয়ে, বউ-সহ গ্রামবাসীরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। আবার কুমারী পুজো হয় দশমীর দিন সকালে।

এক কালে এই এলাকা ছিল আদিবাসী প্রধান। তাই এখনও আদিবাসী, দলিত এবং নিম্ন সম্প্রদায়ের এখানে অবাধ অধিকার। জমিদার প্যারিমোহন এই প্রথা চালু করেছিলেন। কথিত আছে, প্রথম জীবনে দরিদ্র প্যারিমোহন এক মৌলবির সাহায্যে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক কুমিরকোলা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায়দের দুর্গা মন্দির। সব ধর্ম ও বর্ণের, বিশেষ করে মুসলমান সম্প্রদায় পুজোয় হাজির থাকে। বর্তমানে জাঁকজমক, জমিদারী ঠাটবাট আর নেই। মন্দিরের শিল্পকর্ম ও বসতবাড়িও জরাজীর্ণ এবং ভগ্নপ্রায়। তবে আভিজাত্য ও ঐতিহ্যে এখনও সাবেক দিনের ছবি এঁকে চলেছে সস্প্রীতির এই পুজো।

Durga Puja 2021 Bardhaman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}