কেতুগ্রামে নিহত পুলকের শোকার্ত পরিবার। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
গ্রামে তেমন কাজ জোটেনি। বছরের বেশির ভাগ সময়েই অসমের একটি হোটেলে রাঁধুনির কাজ করতেন তিনি। ভোট দেবেন বলে সপ্তাহখানেক আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে বচসায় জড়িয়ে প্রাণটাই যে চলে যাবে, ভাবতে পারেননি কেউই। মৃত্যুর পরে কেতুগ্রামের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা পুলক সরকারের (৫৫) রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও শুরু হয়েছে তরজা।
নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা সরকারের দাবি, শনিবার, ভোটের দিন বুথে যাওয়ার সময় কয়েক জন পুলকের পথ আটকান। কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে বচসা বাধে। বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ওই দিনই কেতুগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে। পরে কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। মঙ্গলবার রাতে পুলকের দেহ ফেরে গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা প্রত্যেকেই এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। ধৃতদের মধ্যে সন্দীপকুমার দাস ওরফে ফুঁচাইয়ের স্ত্রী সন্তোষী দাস কেতুগ্রামের উত্তরপাড়ার এ বারের তৃণমূল প্রার্থী। যদিও ওই বুথে ১৩৯ ভোটে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী সোমা দত্ত।
নিহতের পরিবারের দাবি, মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার জন্য সিএম ও তৃণমূল দু’দলই পুলককে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করছে। কিন্তু তিনি কোনও দল করতেন না, দাবি তাঁদের। বরং সংসার চালাতে গিয়ে ভিন্ রাজ্যে থাকতে হত তাঁকে। ভোট দিতে এসে এমন ঘটনায় সংসার ভেসে গেল, আক্ষেপ তাঁদের। পূর্ণিমা বলেন, ‘‘আমার স্বামী কোনও দল করতে না। কেউ আমাদের কথা ভাবল না।’’ মঙ্গলবার রাতেই উদ্ধারণপুর শ্মশানে দাহ করা হয় পুলককে।
কেতুগ্রামের বাসিন্দা দেবনাথ দে বলেন, “ঘটনার দিন পুলকদাকে সঙ্গে নিয়েই আমি ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছিলাম। ধৃতেরা এসে পথ আটকে বলে, ‘কাকে ভোট দিবি বল?’ বচসা শুরু হতেই ওরা মারধর করে। মাটিতে পড়ে গেলে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে।’’ পুলক কোনও দল করতেন না বলে জানিয়েছেন তিনিও। যদিও কেতুগ্রামের সিপিএম নেতা তমাল মাঝি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি আমাদের দল করতেন। ধৃতেরা তৃণমূল। গ্রামের মানুষ সবই জানেন।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পুলিশ তদন্ত করছে। মৃত ব্যক্তি আমাদের দলের সমর্থক ছিলেন।’’
গ্রামে এক চিলতে মাটির বাড়ি পুলক-পূর্ণিমার। ধারদেনা করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে এখনও বেকার। পূর্ণিমা বলেন, ‘‘কাকে ভোট দেবে, তা নিয়ে ঝামেলায় আমার স্বামীকে মেরে ফেলল ওরা। খুনিদের যেন কড়া শাস্তি হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy