Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
TMC leader accused of harassment

রাজবাড়ির নিরাপত্তারক্ষীকে ‘নিগ্রহ’! সোহমকাণ্ড নিয়ে অস্বস্তির মধ্যেই এ বার বিতর্কে তৃণমূলের পুরপ্রধান

পূর্ব বর্ধমানের কালনার পুরপ্রধান আনন্দ দত্তের বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ তুলে সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে সমাজমাধ্যমে। ওই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি।

ছবি: সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো থেকে।

ছবি: সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ১৭:৫৪
Share: Save:

অভিনেতা-বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে রেস্তরাঁ-মালিককে নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে শাসক তৃণমূলের অস্বস্তি এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই আবার একই রকম বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূলের এক পুরপ্রধান। তাঁর বিরুদ্ধে কালনা রাজবাড়ির নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা দিয়ে নিগ্রহ, গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে।

পূর্ব বর্ধমানের কালনার পুরপ্রধান আনন্দ দত্তের বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ তুলে সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে সমাজমাধ্যমে (ওই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) ভিডিয়োটিতে দেখা গিয়েছে, রাজবাড়িতে টোটো করে জল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা টোটোটিকে আটকে দেন। এতেই রেগে যান আনন্দ। ছুটে গিয়ে এক নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন তিনি।

এই ভিডিয়ো ঘিরেই বিতর্ক বেধেছে। তৃণমূলকে নিশানা করতে শুরু করেছে বিরোধীরা। দলের জেলা সভাপতি সুভাষ পাল বলেন, ‘‘তৃণমূল তো সংবিধান মানে না। তাই নেতারাও সেই রকম। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’’ পুরপ্রধানের সমালোচনা করেছেন কালনার তৃণমূল বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগও। তিনি বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিদের অনেক বিষয়ে সচেতন হতে হয়। না হলে সাধারণ মানুষ তা ভাল চোখে দেখেন না। সাধারণ মানুষ তো কোনও সমস্যায় পড়লে আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু এক জন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ কখনওই কাম্য নয়। দল নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’’ এ নিয়ে আনন্দের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। বুধবার সারা দিন তাঁকে বাড়ি থেকে বেরোতেও দেখা যায়নি। এ বিষয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি রাজবাড়ির ‘নিগৃহীত’ নিরাপত্তারক্ষীও।

কালনা রাজবাড়ি মূলত মন্দিরের জন্যই বিখ্যাত। মন্দির ও মন্দিরের কারুকার্য দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক যান প্রতি বছর। রাজবাড়ি চত্বরের সবচেয়ে পুরনো লালজি মন্দির ২৫টি চূড়াবিশিষ্ট। ১৭৩৯ সালে এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচন্দ্রের মা ব্রজকিশোরী দেবী। লালজি মন্দির চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। লম্বা-চওড়ায় প্রায় ৫৪ বর্গফুট। ৪ ফুট বেদির উপরে অবস্থিত এই মন্দির। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির। এ ছাড়াও আছে নহবতখানা। এখানে একটি রাসমঞ্চও রয়েছে। এই রাসমঞ্চের পাশেই একটি শিবমন্দির আছে, যেখানে প্রতাপেশ্বর শিবলিঙ্গ অধিষ্ঠিত।

স্থানীয় সূত্রে খবর, নিয়ম অনুযায়ী, রাজবাড়ির ভিতরে কোনও গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ। চারচাকা, তিনচাকা এমনকি মোটরবাইকে নিয়ে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, এ কথা জানা সত্ত্বেও কেন রাজবাড়ির ভিতরে গাড়ি নিয়ে গেলেন পুরপ্রধান? শুধু তা-ই নয়, তাঁকে নিষেধ করার সত্ত্বেও ‘দাদাগিরি’ দেখিয়ে, নিরাপত্তারক্ষীকে ‘নিগ্রহ’ করে ভিতরে প্রবেশ করেছেন গাড়ি নিয়ে! প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত পুরপ্রধান আনন্দ অতীতেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। তাঁকে পুরপ্রধান পদে বসানো নিয়ে শাসকদলের অন্দরেই মতভেদ ছিল। বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর তাঁকে পুরপ্রধান হিসাবে মেনে নেননি। যদিও শেষ পর্যন্ত রাজ্য নেতৃত্বের ‘চাপে’ মেনে নেন সব কাউন্সিলর।

সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল। বিধায়ক সোহমের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক রেস্তরা-মালিককে চড়, ঘুষি মেরের নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। দিন তিনেক আগে মুর্শিদাবাদের সালার হাসপাতালের এক নার্সকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেও দলেরই এক নেতাকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কাউন্সিলর সুনন্দা সরকারের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ মঙ্গলবারই বলেছিলেন, ‘‘কেউ অন্যায় কিছু করলে পুলিশে জানানো হোক। দলের সমস্যা থাকলে নেতৃত্বকে জানানো হোক। কিন্তু দলের নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের এমন আচরণ থেকে দূরে থাকা উচিত। যাতে এই রকম অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tmc Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE