Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
ভোরে কাজে যাওয়ার সময়ে গাড়ির ধাক্কায় চার জনের মৃত্যু বর্ধমানে
Road Accident

সংসার চলবে কী করে, প্রশ্ন মৃতদের পরিবারে

এ দিন ভোরে ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বিষ্টু রুইদাস (৪৮), তাঁর স্ত্রী ঝর্না রুইদাস (৪৩) ও ভাইপোর স্ত্রী চম্পা রুইদাস এবং (৪২) তাঁদের পড়শি সরস্বতী সেনের (৫০)।

 শোকার্ত পরিজনেরা।

শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:০৫
Share: Save:

দিনের আলো ফোটার আগেই কাজে বেরিয়ে পড়েন ওঁরা। এ দিনও তেমনই বেরিয়েছিলেন। খানিক পরেই গ্রামে আসে দুঃসংবাদ। গাড়ির ধাক্কায় একই পরিবারের তিন জন-সহ গ্রামের চার জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া বর্ধমানের আলিশা গ্রাম।

এ দিন ভোরে ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বিষ্টু রুইদাস (৪৮), তাঁর স্ত্রী ঝর্না রুইদাস (৪৩) ও ভাইপোর স্ত্রী চম্পা রুইদাস এবং (৪২) তাঁদের পড়শি সরস্বতী সেনের (৫০)। তাঁদের সঙ্গেই কাজে যাচ্ছিলেন গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জু কোটাল। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরেই তাঁরা বাঁকুড়া মোড়ে ধান রোয়ার কাজে যাচ্ছেন। এ দিন ভোর চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি ঝর্নাদেবীদের বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন জানান, তাঁরা আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি সঙ্গে-সঙ্গেই পা চালাই। বড় রাস্তায় (এক্সপ্রেসওয়ে) উঠে দেখি, ওরা হেঁটে যাচ্ছে। আমি গতি বাড়াই। হঠাৎ দেখি, একটা গাড়ি টলমল করতে করতে আমার পাশ দিয়ে গেল। তার পরেই শুব্দ শুনে বুঝতে পারি, গাড়িটা পিছন থেকে ওদের ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। অন্ধকারে গাড়ির রং বুঝতে পারিনি।’’

অঞ্জুদেবী জানান, তিনি দ্রুত গ্রামে গিয়ে খবর দেন। দুপুরে তিনি বলেন, ‘‘এখনও আমার পা কাঁপছে। চোখের সামনেই ঘটনাটা ঘটে গেল!’’ চম্পাদেবীর মেয়ে বন্দনা বলেন, ‘‘বড় রাস্তায় গিয়ে দেখি, দাদু-ঠাকুমার দেহ রাস্তায় পড়ে রয়েছে। আমার মাকে গাড়িটি টেনেহেঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে কিছুটা দূরে। দেহগুলি আস্ত ছিল না।’’ ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে মাধব রুইদাস, বিট্টু দাসদের দাবি, “দেহগুলি ঠিক ভাবে তোলার মতো অবস্থায় ছিল না। বেলচা দিয়ে তুলে বস্তাবন্দি করে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে।’’

চম্পাদেবীর বাড়ি জাতীয় সড়ক লাগোয়া ফাঁকা জায়গায়। ইটের দেওয়াল ও অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া ঘরের পাশে একটি পাকা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। তাঁর মেয়ে বন্দনা বলেন, ‘‘মা ও আমার নামে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এখন আবার আমাদের বাড়ির অর্ধেকের বেশি জায়গা এক্সপ্রেসওয়ে চওড়া করার জন্য নেওয়া হয়েছে। এ বার কী করব, মাথায় আসছে না!’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৯ সালের অগস্টে এই গ্রামে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে বাড়িতে বসেছিলেন, তার পাশেই বাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত দম্পতি বিষ্টু রুইদাস ও ঝর্না রুইদাসের। বাড়িতে রয়েছে দুই ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনি। বড় ছেলে ভাগ্য রুইদাস বলেন, “লকডাউনের সময় থেকে কাজ হারিয়ে বসে রয়েছি। বাবা-মা চাষের কাজের বাইরে সংসার চালানোর জন্য দিনমজুরি করত। এখন কী হবে বুঝতে পারছি না।’’ ছোট ছেলে বিনয় বলেন, ‘‘বাবা-মা দিনরাত পরিশ্রম করে ইটের গাঁথনির বাড়ি তৈরি করছিলেন। ঘরে দরজা নেই। প্লাস্টারও হয়নি। আমি এক চোখে দেখতে পাই না। সংসার চালানোই মুশকিল!’’

দুর্ঘটনাস্থল।

দুর্ঘটনাস্থল।

দুর্ঘটনায় মৃত সরস্বতীদেবীর পুত্রবধূ সুচিত্রাদেবী বলেন, ‘‘শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে আমারও বেরোনোর কথা ছিল। বাড়ির কাজের জন্য পরে যাব বলেছিলাম। পেট তো মানবে না। এর পরেও আমাদের এ ভাবেই কাজে যেতে হবে।’’ সরস্বতীদেবীর ছেলে সমীর বলেন, ‘‘মাকে দূরে কাজে যেতে বারণ করেছিলাম। তা শুনলে আজ এই দিনটা দেখতে হত না।’’

এ দিন হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মৃতের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’ জেলাশাসক মহম্মদ এনাউর রহমান বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য মৃতদের নিকটাত্মীয়কে আর্থিক সাহায্য করা হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য নেওয়া হচ্ছে।’’

গোটা গ্রামে কান্নার আওয়াজ। তার মধ্যে সরস্বতীদেবীর নাতনি সুপ্রিয়া, ঝর্নাদেবীর নাতনি পিউয়েরা মাঝেমাঝেই বলছে, ‘‘চারদিকে এত লোক, ঠাকুমা কোথায়?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy